বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন

বিশেষ বিজ্ঞপ্তি
ভর্তি চলিতেছ রৌফন রেডিয়ান্ট স্কুলে প্লে গ্রুপ থেকে শুরু। চুলকাটি বাজার, (রুটস বাংলাদেশ) বনিকপাড়া রোড, বাগেরহাট।
সংবাদ শিরোনাম :
নয়ন স্মৃতি নাইট শর্ট ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সৈয়দপুর চ্যাম্পিয়ন আত্মসমর্পণকারী দস্যুরা পেল র‌্যাবের ঈদ উপহার বাগেরহাটে দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করেছেন শেখ তন্ময় এমপি বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির দাবিতে মোংলায় মানববন্ধন বর্ণাঢ্য আয়োজনে রামপালে জাতীয় ভোটার দিবস পালন রামপালে স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপন  বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা  প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন পশুর চ্যানেলে তলা ফেটে দুর্ঘটনাকবলীত কার্গো জাহাজটি এখও ঝুকি মুক্ত নয়, চলছে কয়লা অপসারণ মোংলায় কয়লা নিয়ে পশুর নদীতে কার্গো ডুবি, ১১ নাবিক জীবিত উদ্ধার মোংলা বন্দরের সিবিএ’র কর্মচারী সঘের সাবেক সাঃ সম্পাদক এস এম ফিরোজ সহ ৩ জনের সদস্য পদ বাতিল
বিশেষ স্বাদও সুগন্ধের জন্য সুন্দরবনের মধুই সেরা! বনবিভাগ বনসংলগ্ন এলাকায় মান নির্ণয়ের জন্য, বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ঘটানো সম্ভব

বিশেষ স্বাদও সুগন্ধের জন্য সুন্দরবনের মধুই সেরা! বনবিভাগ বনসংলগ্ন এলাকায় মান নির্ণয়ের জন্য, বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ঘটানো সম্ভব

মোল্লা আব্দুর রব (বাগেরহাট ব্যুরো অফিস)
মধু! নাম শোনামাত্র একবার হলেও এর স্বাদ গ্রহনের ইচ্ছে জাগে সবার। আর সুন্দরবনের মধু হলেতো কথাই নেই। দেশজোড়া খ্যাতি ও চাহিদা রয়েছে এই মধুর। শুধু মিষ্ট স্বাদই নয়, বহু ঔষধি গুণও রয়েছে প্রাকৃতিক এই উপাদানটিতে।বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষের মাধ্যমে আবার প্রাকৃতিকভাবেও বহু প্রজাতির মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।কিন্তু গুণে-মানে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের মধুই সেরা।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমান মধু আহরিত হয়। এবছর ৭১২কুইন্টাল মধু এবং ২১৪ কুইন্টাল মোম আহরিত হয়েছে।যা গতবারের তুলনায় মধু বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২শতাংশ।বনবিভাগ মধু ও মোম থেকে রাজস্ব আয় করেছে প্রায় ৯লাখ টাকা। শরণখোলা উপজেলার প্রায় পঁাচ মৌয়াল জীবনের ঝঁুকি নিয়ে গহীন বন থেকে এই মধু আহরণ করেছে।এই মধু শিল্পের সঙ্গে মৌয়াল,তাদের পরিবার ও ব্যবসায়ী মিলিয়ে শরণখোলার প্রায় ৩০হাজার মানুষ সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সুন্দরবনে পাঁচ প্রজাতির মধু পাওয়া যায়।এসব মধুর সঙ্গে ভেজাল মধুও তৈরী করছে অনেকে।মধু আহরণে সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকায় ব্যবহার হচ্ছে সনাতন পদ্ধতি।এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৌমাছিরা।অপরদিকে,মধু আহরণ করতে গিয়ে বনের মধ্যে খাবার পানির সংকট এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে মৌয়ালদের।তাছাড়া,মধু আহরণ,সংগ্রহ,পরিবহন,বিপননেও রয়েছে নানান জটিলতা।বনবিভাগ,মৌয়াল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মধুর আদ্যপান্ত।
মধু মাসের শুরুঃ
এপ্রিল মাস থেকেই শুরু হয় মধু আহরণের মৌসুম।চলে জুন পর্যন্ত।সুন্দরবনের সবচেয়ে সুস্বাদু ও দামি খলিসা ও গরাণ ফুলের মধু আসে প্রথম মাসে।এর পর পরই আসে কেঁওড়া ও গেওয়ার মধু। আবার ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পাওয়া যায় জার্মানি লতা (স্থানীয় ভাষায় যশোরি লতা) ফুলের মধু। মধু আহরণের জন্য বনবিভাগের নির্ধারিত রাজস্বের মাধ্যমে ১৫দিনের পাস দেওয়া হয়।পাস নিয়ে শরণখোলা রেঞ্জের নির্ধারিত দুবলা,নীলকমল,ভেদাখালী,আমবাড়িয়া,কালামিয়া,আগুনজ্বলা খাল ও খাজুরা এলাকার বনে যায় মৌয়ালরা।
আহরণের পদ্ধতিঃ
প্রায় ৩০বছর ধরে সুন্দরবনে মধু আহরণ করেন উপজেলার দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া গ্রামের আনোয়ার আকন (৫০)।এবছর তারা এক নৌকায় আট জন দুবলার বনে গিয়েছিলেন মধু আহরণ করতে। তিন মাসে একেকজনে ভাগে সাড়ে তিন মন করে মধু পেয়েছেন।তিন জানান,তারা মশাল পুড়িয়ে ধেঁায়া তৈরী করে মৌমাছি তাড়িয়ে চাক থেকে মধু আহরণ করেন।চাকের কিছু অংশ অবশিষ্ট রেখে বাকিটা কেটে আনা হয়।যাতে পরবর্তীতে মৌমাছি নতুন করে চাক তৈরী করতে পারে।এভাবে কাটার ফলে একেকটি চাক থেকে তিন বার মধুসংগ্রহ করা যায়।
সমস্যা ঃ

মধু আহরণে তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই জানান আহরণকারীরা।এজন্য অনেক মৌয়ালকে এখনও চাকে আগুন জ্বালিয়ে মধু ভাঙতে দেখা গেছে।এতে মৌমাছি পুড়ে মারা যায়।অনেকে পুরো চাক কাটার ফলে নতুন করে সেখানে আর মৌচাক তৈরী হয়না।তাছাড়া, মধু আহরণ করতে গিয়ে গহীন বনে মৌয়ালদের সুপেয় পানি সংকট ও সাপ বা বন্য প্রাণির আক্রমণে আহত হলে চিকিৎসা সমস্যায় পড়তে হয়।সংশ্লিষ্টদের দাবি,বনের বাঘ,হরিণকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়,একইভাবে রাজস্ব আয়ের অন্যত খাত মৌমাছি সংরক্ষণেও উদ্যোগ নিতে হবে।প্রশিক্ষিত করতে হবে মৌয়ালদের। সুন্দরবনে মধু আহরণের এলাকা বৃদ্ধি করতে হবে।বনবিভাগকে মৌয়ালদের দ্রুত এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা যাওয়ার ব্যবস্থা,মধু পরিবহন ও বিপননে সহায়তা করেত হবে।এতে সুন্দরবন থেকে আহরিত মধু ও মোমে দেশের চাহিদা অনেকটা পুরোণ করা সম্ভব হবে।ভেজাল মধু তৈরী ও চেনার উপায়ঃ
উচ্চতাপে চিনি জ্বালিয়ে প্রথমে গাড়ো রস তৈরী করা হয়।এর পরে ২০কেজি মধুর সঙ্গে ২০কেজি চিনির রস মেশানো হয়।আবার ফিটকিরির পানি এবং চিনি জ্বালিয়ে তার সঙ্গে মধুর ফ্লেভার দিয়ে ভেজাল মধু তৈরী করা হয়।ভেজাল মধু চেনার উপায় হলো,ফ্রিজে কিছুদিন রাখার পরই তা জমে যায়।এই মধু বেশিদিন রাখলে তলানি জমে এবং দুর্গন্ধ তৈরী হয়।তাই ভেজালকারীরা তা দ্রুত কম দামে বিক্রি করে দেয়।অনেকে আসল-নকল না বুঝেই বেশি দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের মতামতঃপ্রায় একযুগ ধরে মধুর সঙ্গে সম্পর্ক শরণখোলার বনসংলগ্ন খুড়িয়াখালী গ্রামের রাসেল আহমেদের। সুন্দরবনের পাশাপশি বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষের মধুও সংগ্রহ করেন তিনি।দুই ধরণের মধুর পার্থক্য খুঁজতে গিয়ে স্বাদ-গন্ধ ও গুণে-মানে সুন্দরবনের মধু সেরা বলে বিবেচিত হয়েছে তার এবং তার গ্রাহকদের কাছে।রাসেল জানান,মৌসুমের শুরুর দিকে ২০-২২হাজার টাকায় মন থাকে। বর্তমানে মধুর চাহিদা ব্যাপক।তাই এখন প্রতিমন মধু ৩০-৩৫হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে মধু পৌঁছে দেওয়া হয় খুচরা গ্রাহকের কাছে।তাছাড়া, সিলেটের প্রকৃতি অনলাইন সপ,ঢাকার মৃন্ময় অ্যাগ্রো এবং চট্টগ্রামের গ্রীণবেল্টে নিয়মিত মধু পাইকারী সরবরাহ করেন।প্রতি বছর মধু থেকে তার আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা লাভ থাকে।সম্ভাবনাঃরাসেল আরো জানান,সুন্দরবনের মধুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।তাই অনেক সময় মধু বিক্রি করতে গিয়ে এর মান নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়।সরকার বা বনবিভাগ বনসংলগ্ন এলাকায় মান নির্ণয়ের জন্য ল্যাব স্থাপন, সহজভাবে বিএসটিআইর অনমোদন পাওয়া, ব্যবসায়ী ও মৌয়ালদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে সুন্দরবনের মধু ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ঘটানো সম্ভব।ইউকিপিডিয়ারতথ্যমতেঃবাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু স্বাদ,রঙ ও বিশেষ সুগন্ধের জন্য প্রসিদ্ধ।এটি উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেসজ তরল এবং সুপেয়। এর বিশেষ গন্ধের জন্য অনেকে চিনির চাইতে মধুকেই বেশি পছন্দ করে। মধুতে ৪৫টিরও বেশি খাদ্যগুণ রয়েছে।যার সবগুলোই মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। খাটি মধুর অনন্যগুণ হলো এটি কখনো নষ্ট হয় না।
বনবিভাগের ভাষ্যঃ

পূর্ব সুন্দরবনের ডি এফ ও মো: বেলায়েত হোসেন ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদী বলেন, সুন্দরবনের মধু আহরণকারীদের নিরাপত্তায় বনবিভাগ সব সময় সহযোগীতা করে থাকে।মধু আহরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যহতার এবং তাদেরকে প্রশিক্ষিত করার জন্য সামনে সুন্দরবন সুরক্ষায় যে সব প্রকল্প আসছে এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য উর্ধতন কতর্ৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।
এসিএফ জানান, গতবারের চেয়ে এবছর প্রায় ৩২শতাংশ মধু বেশি আহরিত হয়েছে।রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।শরণখোলা স্টেশন থেকে প্রায় পঁাচ হাজার মৌয়ালকে মধু সংগ্রহের পাস দেওয়া হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

  1. © স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০২০২১, www.chulkati24.com

কারিগরি সহায়তায়ঃ-SB Computers