শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন
মোল্লা আব্দুর রব বাগেরহাট
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শতবর্ষী রাস উৎসব। রোববার (০৬ নভেম্বর) সকালে থেকে সুন্দরবনের আলোরকোলে পুণ্যার্থীদের আগমন শুরু হয়।৬ নভেস্বর থেকে ৮ নভেম্বর তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এ ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার সন্ধ্যায় দুবলার চরের মন্দিরে সন্ধ্যাপূজার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ রাস উৎসব শুরু করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও প্রতিবছর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।২০১৯ সালের আগে প্রতিবছর দুবলার চরে পূজার পাশাপাশি রাস মেলাও অনুষ্ঠিত হত।কিন্তু ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সুন্দরবনে রাস মেলা হয়নি।করোনার কারণে ২০২০ সাল থেকে মেলা বন্ধ রাখে প্রশাসন।এরপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। রাস উৎসব বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন,করোনা সংক্রমন এড়াতে এবারও খুবই স্বল্প পরিসরে রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।আশা করছি এ বছর সকলের সহযোগিতায় আমরা সুষ্ঠভাবে এই উৎসব সম্পূর্ণ করতে পারবো।
বন বিভাগ সূত্রে জানাযায়,পুণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতে তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে।এসব পথে বন বিভাগ,পুলিশ,ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। সুন্দরবন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন,রবিবার (৬ নভেম্বর) দিনের বেলায় যাত্রা শুরু করতে হবে এবং নৌযানগুলো কেবল দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে।বনবিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না।প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে বিএলসি অথবা সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে।সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস্থানকালীন সব সময় টোকেন ও টিকিট নিজের সঙ্গে রাখতে হবে।রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নানের সময় কোনো বিস্ফোরকদ্রব্য,আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।কারো কাছে আগ্নেয়াস্ত্র,বিস্ফোরকদ্রব্য,হরিণ মারার ফাঁদ,দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল,করাত ইত্যাদি অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ট্রলারে কোনো প্লাস্টিকের খাবারের প্লেট বহন করা যাবে না।লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যস্নান স্থানে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ফোটানোসহ কোনো প্রকার শব্দ দূষণ করা যাবে না।রাস পূর্ণিমায় আসা পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত নাগরিকত্বের সনদপত্রের মূলকপি সঙ্গে রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।
কি ভাবে শুরু হলো রাস উৎসবঃ হিন্দু ধর্মবলম্ব^ীদের তথ্যমতে জানাযায়,রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয়ভাব ধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব।শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসের সমৃদ্ধ কথা বস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় রুপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে থাকে।হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বঙ্গপসাগরের চর আলোরকোল এলাকায় বসে পুর্ণিমার জোয়ারে স্নান করে, যাতে তাদের সকল পাপ মোচন হয়ে যায়। যদিও, ‘রাস-লীলা’ নিয়ে বেশকিছু মত প্রচলিত আছে।এরমধ্যে বহুল জনপ্রিয় দু’টি মত।এই দুই মতেই কেন এই রাস-লীলা তার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কথিত আছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ পাপমোচন ও পূর্ণলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। এই থেকেই শুরু হয় ‘রাস উৎসব’।আবার অন্য মতালম্বীদের মতে, দুর্গাপুজোর পর পূর্ণিমাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে ‘লীলা’-য় মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।আর সেই থেকেই কার্তিক মাসের পূর্ণিমাতে ‘রাস-লীলা’ পালিত হয়ে আসছে।
Leave a Reply