সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) আরো তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট আটটি হত্যা মামলার আসামি হলেন তিনি।
বুধবার তিনটি হত্যা মামলার মধ্যে দুটি কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (টেকনাফ-৩) হেলাল উদ্দীনের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। মামলা দুটিতে মোট ৫৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটি চট্টগ্রামের আদালতে দায়ের করা হয়েছে।
এর মধ্যে একটি মামলা করেছেন টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাইঙ্গ্যা ঘোনা এলাকার বাসিন্দা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত মুছা আকবরের (৩৫) স্ত্রী শাহেনা আকতার। অপর মামলাটি করেছেন একই ইউনিয়নের কাঞ্জরপাড়া এলাকার বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাহাব উদ্দিনের (৩০) বড়ভাই হাফেজ আহমদ।
পরে আদালত চত্বরে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানান, মুছা আকবরের হত্যা মামলায় হোয়াইক্যং ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে প্রধান ও প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। আর সাহাব উদ্দিন হত্যা মামলায় উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক বিশ্বাসকে প্রধান এবং ওসি প্রদীপকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, দুটি মামলার ক্ষেত্রেই এজাহার আমলে নিয়ে আদালত বলেছেন, এ ব্যাপারে আগে কোনো মামলা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য।
অপরদিকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার মো. ফারুক ও তার ছোটভাই আজাদকে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি ও হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহতদের ছোট বোন রিনা সুলতানা শাহীন।
এই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। এটিই ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা।
এরপর গত ১৮ আগস্ট চাহিদামতো ঘুষ দেয়ার পরও সাদ্দাম হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ এনে প্রদীপ কুমার দাসসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়। এই মামলাটি করেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার গুল চেহের।
গত ২৬ আগস্ট মাহমুদুর রহমান নামে এক প্রবাসীকে ক্রসফায়ারে দেয়ার অভিযোগ এনে তার ভাই নুরুল হোসাইন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত-৩-এ ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আরেককটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক চন্দ্রকে প্রধান আসামি করে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় আসামি মোট ২৩ জন। শুনানি শেষে ওই ঘটনায় অন্য কোনো হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে কি না, তা আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আব্দুল জলিলকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে পরের দিন ২৭ আগস্ট টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তার স্ত্রী সানোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে ১২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মসিউর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়। আসামি হিসেবে ওসি প্রদীপ কুমারের নাম রয়েছে দুই নম্বরে।
দুই সহোদর ও ভাগনেকে হত্যার দায়ে গত ৩১ আগস্ট কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেলাল উদ্দীনের আদালতে মামলা দায়ের করেন টেকনাফ উপজেলার রঙ্গিখালী এলাকার বাসিন্দা সুলতানা রাবিয়া মুন্নী। মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে ৩৫ জনই পুলিশ সদস্য। ওসি প্রদীপকে মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। একটি মামলায় হয় টেকনাফ থানায়। এই মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও গুলিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলার আসামি করা হয় সিফাতকে। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় আসামি করা হয় শিপ্রা দেবনাথকে।
৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন বাদী হয়ে একই আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরের দিন বিকেলে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত, এসআই নন্দলাল রক্ষিতসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একই আদালত র্যাবের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দলাল রক্ষিতকে সাত দিনের রিমান্ড এবং অপর চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এসআই লিটনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও মো. মোস্তফা আদালতে হাজির হননি। পুলিশের দাবি, এই নামে জেলা পুলিশে কেউ নেই।
এরপর থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নানা কুকীর্তির বিবরণ বেরিয়ে আসছে। তার বিরুদ্ধে উঠছে একের পর এক হত্যার অভিযোগ।
Leave a Reply