বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ অপরাহ্ন
বাগেরহাট প্রতিনিধি :
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ (পিইডিপি-৪) এর সাব-কম্পোনেন্ট ২.৫ ‘আউট-অব-স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচি’ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে দুটি এনজিও নিকেতন সংস্থা ও সমাজ প্রগতি সংস্থার কাজ করছে।
‘সুখী মানুষ’ নামক বেসরকারী সংস্থা বাগেরহাট জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য লিড এনজিও হিসেবে নির্বাচিত হয়। ‘সুখী মানুষ’ লিড এনজিও এর দায়িত্বে কচুয়া উপজেলার ঝরে পড়া শিশুদের জন্য চালু করা হয় উপ-অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহনের পর থেকেই নানা ধরনের অনিয়মের মধ্যে দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
নিকেতন সংস্থা ও সমাজ প্রগতি সংস্থা উপজেলার ৮-১৪ বছর বয়সের মোট ২২৫০জন ঝরে পড়া শিশুর তালিকা করে ৭৫ টি কেন্দ্রে, প্রতি কেন্দ্রে ৩০ জন শিক্ষার্থীর নাম দিয়ে শিক্ষক ও সুপার ভাইজার নিয়োগ করেছে। নিকেতন সংস্থা ৪০টি ও সমাজ প্রগতি সংস্থা ৩৫টি সার্বিক দায়িত্বে কাজ করছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের সুন্দর ও পরিস্কার পরিবেশে পাঠদানের জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য ১হাজার ৫শ টাকা ভাড়া, শিক্ষা কেন্দ্রে ডেকোরেশন খরচ ৫০০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক ভাতা জনপ্রতি ১২০ টাকা করে ৩৬ মাস, ফ্লোর খরচ ৫ হাজার টাকা, ৩ হাজার টাকা বাজেটের ফ্যান, টিউব লাইট, পানির জার, স্টিলের ট্রাঙ্ক, জাতীয় পতাকা, সাইনবোর্ড, হাতলসহ চেয়ার, টুল, স্কুল ব্যাগ, স্কুল ড্রেস, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড, টিচিং এইডস এবং গেমস উপকরন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে নেই।
নিকেতন সংস্থার কয়েকটি শিক্ষা কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায় ‘আউট-অব-স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচি’ সাইনবোর্ড আছে ঘর নেই, শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী নেই, আবার কয়েকটি শিক্ষা কেন্দ্রের কোন অস্তিত পাওয়া যাযনি। এছাড়া কাগজ কলমে নাম আছে কিন্ত বাস্তবে নাই। পরিত্যক্ত ঘরে এবং গাছের সাথে সাইনবোর্ড লাগানো দেখা গেছে। কচুয়া সদরের ৪ নং ওয়ার্ডে আড়িয়ামর্দ্দন গ্রামে দুটি শিক্ষা কেন্দ্রের দুই নং শিক্ষা কেন্দ্র যার কোড নং ২২১০০১২২৯ এর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। নির্মল কুমার মিস্ত্রীর বাড়ি পরিত্যক্ত ঘরে শিক্ষাকেন্দ্র যার কোড নং ২২১০০১২২২,গিয়ে দেখা যায় কোন ছাত্র ছাত্রী নেই। ওই কেন্দ্রের শিক্ষকের নিকট থেকে ছাত্র-ছাত্রীর তালিকায় দেখায়ায় আড়িয়ামর্দ্দন গ্রামের মতিয়ার শেখের ছেলে ছাব্বির হোসেন, মহাশিন শেখের কন্যা ফারজান আক্তার, নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী, জিয়াউর রহমানে কন্যা সাদিয়া আক্তার ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী,মনিরুজ্জামানের কন্যা জান্নাতুল ফেরদাউস ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী, মিন্টু সাহার পুত্র শান্ত সাহা, শেখর মন্ডলের কন্যা স্বনালী মন্ডল কচুয়া শিশু নিকেতনের শিক্ষর্থী।
বড় আন্ধারমানিক শিক্ষাকেন্দ্র যার কোড নং ২২১০০১২০৪ গিয়ে দেখা যায় শিক্ষিকা নাজমা মাহমুদের পরিত্যেক্ত ঘরে সাইনর্বোড কোন ছাত্র ছাত্রী নেই। শেরে বাংলা ফজলুল হক বিদ্যানিকেতন সম্মানকাঠী এর বিভিন্ন শ্রেনীর ৩০জন ছাত্র-ছাত্রীর নাম দিয়ে তাদের ঝরে পড়া শিশু দেখিয়ে শিক্ষা কেন্দ্র করেছে। তালিকাতে যে সকল শিক্ষার্থীদের নাম আছে তার অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। কচুয়া সদরে কুল টেংরাখালী শিক্ষা কেন্দ্র যার কোড নং ২২১০০১২৩২, ধোপাখালী ০৮ নং ওয়ার্ডের বারো দাড়িয়া শিক্ষা কেন্দ্র যার কোড নং ২২১০০১১০৮, গজালিয়া ২ নং ওয়ার্ড সোনা কান্দর শিক্ষা কেন্দ্র যার কোড নং ২২১০০১১০১ এর কোন অস্তিত পাওয়া যায়নি। কচুয়া সদরের ওবাইদুল শিকদারের বাড়ি শিক্ষা কেন্দ্র ২২১০০১২৩১ সাইনর্বোড গাছের সাথে। অধিকাংশ শিক্ষাথীর নাম দেওয়া আছে অথচ তারা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়াশুনা করছে।
এনজিওর নিয়োগ প্রাপ্ত একাধিক শিক্ষক- শিক্ষিকা জানান, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ২/৪ জন পাওয়া যায় এখন এসব এলাকায় ঝরে পড়া শিশু পাওয়া যায় না। তারপরও আমরা চেষ্ঠা করছি ওই সকল শিশুদের শিক্ষন কেন্দ্রে আনার। তারা জানান খাতা কলমে ২৭ থেকে ৩০ জনার নাম থাকলেও প্রতিদিন হাজির হয় ১০/১২ জন। তাদের মধ্যে ১/২ জন ঝড়ে পড়া শিশু রয়েছে।
শেরে বাংলা ফজলুল হক বিদ্যানিকেতন সম্মানকাঠী এর শিক্ষক আবু বক্কর শেখ জানায়, নাজমা মাহমুদ আমাদের বলে আমি একটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রের চাকরি পেয়েছি সেখানে বিকালে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াবো তাই আপনাদের বিদ্যানিকেতন থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর নাম দেন তার কথায় আমরা ভাবলাম যে ছেলে মেয়েদের পড়াবে তাতে আমাদেরই তো ভালো সেই ভেবে নাম নিতে বলি।
নিকেতন সংস্থার কচুয়া উপজেলা শাখার ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, দুই একটা কেন্দ্রে ঘরের জায়গা কম থাকতে পারে মোটা মুটি জিনিস পত্র দিয়েছি। কারো বারান্দায় থাকতে পারে তবে আমার জানা মতে এরকম নাই। এছাড়া বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী আমাদের কোন কেন্দ্রে নাই।
লিড এনজিও সুখি মানুষ এনজিওর নির্বাহী পরিচালক নাফিছা আফরোজ বর্ণ বলেন, আমি নিজের লোক
পাঠিয়ে প্রত্যেকটা কেন্দ্রের সকল বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রাহন করবো।
Leave a Reply