মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন
চুলকাঠি ডেস্ক :যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লোকের আগমন ঘটেছে। তারা অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এদেশে থেকেও গিয়েছে। ফলে কালক্রমে তাদের ভাষার অনেক শব্দ আমাদের ভাষায় কখনো পরিবর্তিত আকারে আবার কখনো অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এছাড়া দীর্ঘকাল ধরে এ দেশটা শাসন করেছে ইংরেজ জাতি। তারও আগে এদেশে ছিল মুসলিম শাসন। তখন সারা দেশে ব্যাপকভাবে ফারসি ভাষার প্রচলন ছিল। ধর্মীয় ব্যাপারস্যাপারে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায় আরবি ভাষা ব্যবহার করেছেন। ফলে এই সব ভাষার প্রচুর শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে। তাছাড়া বাংলা ভাষায় আছে কিছু দেশি শব্দ। এভাবে যুগ যুগ ধরে বাংলা ভাষায় শব্দসম্ভার গড়ে উঠেছে।
ফলে বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় উৎস/ উৎপত্তি বিচারে।
১। তৎসম : তৎসম অর্থ সংস্কৃতের সমান। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য, আকাশ,পানি, চক্ষু, কর্ণ ইত্যাদি।২। অর্ধতৎসম: অর্ধতৎসম অর্থ আধা সংস্কৃত। যেমনঃ কুচ্ছিত, গিন্ন, বোষ্টম, ছেরাদ্দ ইত্যাদি।
৩। তদ্ভবঃ তদ্ভব অর্থ সংস্কৃত থেকে উৎপন্ন। সংস্কৃত যখন প্রাকৃত ভাষার ভিতর দিয়ে রূপ পাল্টাতে পাল্টাতে শেষকালে বাংলা ভাষায় এসে পৌঁছায়, তখন তা তদ্ভব শব্দ হিসেবে পরিগণিত হয়। যেমন: সংস্কৃত- চন্দ্র প্রাকৃত- চন্দ বাংলা- চাঁদ
৪। দেশি শব্দ: দেশি ভাষার নিজস্ব সম্পদ গুলোই দেশি শব্দ। যেমন: কুলা, গঞ্জ, টোপর, ডাব, ডাগর, ঢেঁকি, ডিঙা, মুড়কি, ঢোল ইত্যাদি। তবে কুড়ি বা বিশ- কোল ভাষা, পেট বা উদর তামিল ভাষা, চুলা বা উনুন- মুন্ডারী ভাষা।
৫। বিদেশি শব্দ: যত ধরনের বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় রয়েছে সে সব বিচারে দেখা ৬ ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) আরবি শব্দঃ আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, আদাল, আলেম ইনসান, ঈদ, উকিল, মুন্সেফ, মোক্তার রায় ইত্যাদি।খ) ফারসি শব্দঃ খোদা, বেহেশত, রসদ, দফত, রসদ, আদমি, আমদানি, তারিখ, চশমা, বন্দা, নমুনা, বদমাস ইত্যাদি।
গ) পর্তুগিজ শব্দঃ আনারস, আলপিন, আলমারি, চাবি, পাউরুট, পাদ্রি ইত্যাদি।
ঘ) ফরাসি শব্দঃ কার্তুজ, কুপন, ডিপো, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।
ঙ) ওলন্দাজ শব্দঃ ইস্কাপন, টেককা, তুরপ, রুইতন, হরতন ইত্যাদি।
চ) গুজরাটি শব্দঃ খদ্দ, হরতাল ইত্যাদি।
ছ) পাঞ্জাবি শব্দঃ চাহিদা, শিখ ইত্যাদি।
জ) তুর্কি শব্দ: চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা ইত্যাদি।
ঝ) চিনা শব্দঃ চা, চিনি ইত্যাদি।ঞ) মায়ানমার(বর্মি): ফুঙ্গি, লুঙ্গি ইত্যাদি।
ট) জাপানিঃ রিক্সা, হারিকিরি ইত্যাদি।
এছাড়াও কিছু মিশ্র এবং পারিভাষিক শব্দ রয়েছে।আমাদের বাংলা ভাষায় অনেকেই বহিরাগতভাবে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দ্যেশে আসার পর তাদের ব্যবহৃত ভাষার কিছু অংশ বাংলা ভাষার সাথে মিশে এক প্রকার ভাষার সৃষ্টি করেছে এবং আমাদের বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। সে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় মিশ্র শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমনঃ
রাজা-বাদশা= তৎসম+ফারসি
হাট-বাজার= বাংলা+ফারসি
হেড-মৌলভি= ইংরেজি+ফারসি
হেড-পন্ডিত= ইংরেজি+তৎসম
খ্রিস্টাব্দ= ইংরেজি+তৎসম
ডাক্তারখানা= ইংরেজি+ফারসি
পকেট-মার= ইংরেজি+বাংলা
চৌ-হদ্দি= ফারসি+আরবিপারিভাষিক শব্দঃ বাংলায় বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক প্রতিশব্দকে পারিভাষিক শব্দ বলে। যেমনঃ অম্লজান-oxyzen, উদযান-hydrogen, নথি-file, প্রশিক্ষণ-training, ব্যবস্থাপক-manager, বেতার-radio, মহাব্যবস্থাপক-general manager, সচিব-secretary, স্নাতক-graduate, স্নাতকোত্তর-post graduate, সমাপ্তি-final, সাময়িকী-periodical, সমীকরণ-equation ইত্যাদি।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা দ্বিতীয় পত্র এর ব্যাকরণ অংশের ৩০ নম্বরে ভাল করার জন্য কিছু প্রশ্নের উত্তর ধারাবাহিকভাবে প্রদান করা হল শিক্ষার্থীদের সুবিধার্তে।
***বাক্য কাকে বলে? একটি সার্থক বাক্যের কি কি গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক উদাহরণ সহ আলোচনা কর।
উত্তর : যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়, তাকে বাক্য বলে।
কতকগুলো পদের সমষ্টিতে বাক্য গঠিত হলেও যেকোনো পদ সমষ্টিই বাক্য নয়। বাক্যের পদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা অন্বয় থাকা আবশ্যক। এছাড়াও বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদ দ্বারা মিলিতভাবে একটি অখন্ড ভাব পূর্ণ রুপে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন, তবেই তা বাক্য হবে।
প্রত্যেক বস্তুর যেমন গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকে তেমনি ভাষার বিচারে বাক্যের নিম্নে বর্ণিত তিনটি গুণ থাকা চাই। যেমন : ১) আকাঙ্ক্ষা ২) আসত্তি ৩) যোগ্যতা১। আকাঙ্ক্ষা : বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তা-ই আকাঙ্ক্ষা। যেমন: “চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে “- এটুকু বললে বাক্যটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে না, আরও কিছু শোনার ইচ্ছা থাকে। বাক্যটি এভাবে পূর্ণাঙ্গ করা যায়; চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে। এখানে আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয়েছে বলে এটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য।
২। আসত্তি : মনোভাব প্রকাশের জন্য বাক্যগুলো এমনভাবে পর পর সাজাতে হবে যাতে মনোভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্থ না হয়। বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই আসত্তি। যেমনঃ কাল বিতরণী হবে উৎসব স্কুলে আমাদের পুরস্কার অনুষ্ঠিত। লেখা হওয়াতে পদ সন্নিবেশ ঠিকভাবে না হওয়ায় শব্দগুলির অন্তর্নিহিত ভাষাটি যথাযথ প্রকাশিত হয়নি। তাই এটি একটি বাক্য হয়নি। মনোভাব পূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্য পদগুলোকে নিম্নলিখিতভাবে যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট করতে হবে। যেমনঃ “কাল আমাদের স্কুলে পুরষ্কার বিতরণী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।” বাক্যটি আসত্তি সম্পন্ন।
৩। যোগ্যতা : বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তর্গত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমনঃ “বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়।”- এটি একটি যোগ্যতাসম্পন্ন বাক্য। কারণ, বাক্যটিতে পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত সমন্বয় রয়েছে।
কিন্তু,” বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে।”- বললে বাক্যটি ভাব প্রকাশের যোগ্যতা হারাবে। কারণ, রৌদ্র প্লাবন সৃষ্টি করে না।
উপর্যুক্ত আলোচনা হতে এটায় প্রতীয়মান হয় যে প্রত্যেক সার্থক বাক্যের গুণ গুলো বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। (মাধ্যমিক ব্যাকরণ)যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লোকের আগমন ঘটেছে। তারা অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এদেশে থেকেও গিয়েছে। ফলে কালক্রমে তাদের ভাষার অনেক শব্দ আমাদের ভাষায় কখনো পরিবর্তিত আকারে আবার কখনো অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এছাড়া দীর্ঘকাল ধরে এ দেশটা শাসন করেছে ইংরেজ জাতি। তারও আগে এদেশে ছিল মুসলিম শাসন। তখন সারা দেশে ব্যাপকভাবে ফারসি ভাষার প্রচলন ছিল। ধর্মীয় ব্যাপারস্যাপারে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায় আরবি ভাষা ব্যবহার করেছেন। ফলে এই সব ভাষার প্রচুর শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে। তাছাড়া বাংলা ভাষায় আছে কিছু দেশি শব্দ। এভাবে যুগ যুগ ধরে বাংলা ভাষায় শব্দসম্ভার গড়ে উঠেছে।
ফলে বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় উৎস/ উৎপত্তি বিচারে।
১। তৎসম : তৎসম অর্থ সংস্কৃতের সমান। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য, আকাশ,পানি, চক্ষু, কর্ণ ইত্যাদি।
২। অর্ধতৎসম: অর্ধতৎসম অর্থ আধা সংস্কৃত। যেমনঃ কুচ্ছিত, গিন্ন, বোষ্টম, ছেরাদ্দ ইত্যাদি।
৩। তদ্ভবঃ তদ্ভব অর্থ সংস্কৃত থেকে উৎপন্ন। সংস্কৃত যখন প্রাকৃত ভাষার ভিতর দিয়ে রূপ পাল্টাতে পাল্টাতে শেষকালে বাংলা ভাষায় এসে পৌঁছায়, তখন তা তদ্ভব শব্দ হিসেবে পরিগণিত হয়। যেমন: সংস্কৃত- চন্দ্র প্রাকৃত- চন্দ বাংলা- চাঁদ
৪। দেশি শব্দ: দেশি ভাষার নিজস্ব সম্পদ গুলোই দেশি শব্দ। যেমন: কুলা, গঞ্জ, টোপর, ডাব, ডাগর, ঢেঁকি, ডিঙা, মুড়কি, ঢোল ইত্যাদি। তবে কুড়ি বা বিশ- কোল ভাষা, পেট বা উদর তামিল ভাষা, চুলা বা উনুন- মুন্ডারী ভাষা।
৫। বিদেশি শব্দ: যত ধরনের বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় রয়েছে সে সব বিচারে দেখা ৬ ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) আরবি শব্দঃ আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, আদাল, আলেম ইনসান, ঈদ, উকিল, মুন্সেফ, মোক্তার রায় ইত্যাদি।
খ) ফারসি শব্দঃ খোদা, বেহেশত, রসদ, দফত, রসদ, আদমি, আমদানি, তারিখ, চশমা, বন্দা, নমুনা, বদমাস ইত্যাদি।
গ) পর্তুগিজ শব্দঃ আনারস, আলপিন, আলমারি, চাবি, পাউরুট, পাদ্রি ইত্যাদি।
ঘ) ফরাসি শব্দঃ কার্তুজ, কুপন, ডিপো, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।
ঙ) ওলন্দাজ শব্দঃ ইস্কাপন, টেককা, তুরপ, রুইতন, হরতন ইত্যাদি।
চ) গুজরাটি শব্দঃ খদ্দ, হরতাল ইত্যাদি।
ছ) পাঞ্জাবি শব্দঃ চাহিদা, শিখ ইত্যাদি।
জ) তুর্কি শব্দ: চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা ইত্যাদি।
ঝ) চিনা শব্দঃ চা, চিনি ইত্যাদি।
ঞ) মায়ানমার(বর্মি): ফুঙ্গি, লুঙ্গি ইত্যাদি।
ট) জাপানিঃ রিক্সা, হারিকিরি ইত্যাদি।
এছাড়াও কিছু মিশ্র এবং পারিভাষিক শব্দ রয়েছে। যেগুলো পরবর্তী বিষয়ের সাথে আলোচনা করা হবে
উপস্থাপনাায় : রাহুল বণিক বিবিএ(সম্মান), এমবিএ(হিসাববিজ্ঞান)
Leave a Reply