মুনতাসীর মামুনের করা রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দস ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারিসহ এই আদেশ দেন। আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক।
এ কে রাশেদুল হক জানান, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ চর্চা/৩’ বইটি প্রকাশ পায়। বইয়ের লেখক মো. আবুবকর সিদ্দিকীর ‘মুক্তিযুদ্ধে দৌলতপুর: একটি সমীক্ষা’ শিরোনামের প্রবন্ধে শান্তি কমিটির সদস্যদের নামের তালিকায় ৩৬ নম্বর ক্রমিকে উঠে আসে মন্নুজান সুফিয়ানের বাবা ‘মৃত মোসলেম বাওয়ালী’র নাম।
এ বিষয়ে জানতে ২০১৮ সালের ১ জুলাই বইটির সম্পাদক মুনতাসীর মামুনের কাছে উকিল নোটিশ পাঠান মন্নুজান সুফিয়ান। পরে নোটিশের জবাব দেন মুনতাসীর মামুন।
একই বছরের ১৯ জুলাই ফের মুনতাসীর মামুনকে উকিল নোটিশ পাঠান মন্নুজান সুফিয়ান। নোটিশে এ তথ্য প্রকাশের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়। পাশাপাশি যে লেককের প্রবন্ধে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে মন্নুজান সুফিয়ানের বাবার নাম উঠে এসেছে, সে লেখক আবুবক্কর সিদ্দিকীর বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু মুনতাসীর মামুন এ বিষয়ে রাজি হননি।
পরে প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন।
একই বছরের ২২ জুলাই তামাদি আইনের ২৪ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে মামলাটি বাতিল চেয়ে জজ আদালতে আবেদন করেন মুনতাসীর মামুন। কিন্তু চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি আবেদনটি খারিজ করে দেন আদালত।
এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্টে রিভিশন করেন মুনতাসীর মামুন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলাটি বাতিল চেয়ে বিচারিক আদালতে মুনতাসির মামুনের আবেদন খারিজ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে বলে জানান রাশেদুল হক।
রাশেদুল হক আরও বলেন, আমাদের যুক্তি ছিল, তামাদি আইন অনুসারে মানহানির ক্ষতিপূরণের জন্য মানহানিকর তথ্য প্রকাশের এক বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। অথচ ওই তথ্য প্রকাশের ১৪ বছর পর এসে মামলা হয়েছে। আর বইয়ে মন্নুজান সুফিয়ানের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সেখানে মৃত ব্যক্তির হয়ে তিনি মামলা করতে পারেন কি-না?
বাংলাদেশ চর্চা/৩ বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মন্নুজান সুফিয়ান মামলাটি করেন ১৪ বছর পরে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বইটি মুনতাসীর মামুনের সম্পাদিত বই। বইটিতে লেখক মো. আবুবকর সিদ্দিকীর ‘মুক্তিযুদ্ধে দৌলতপুর: একটি সমীক্ষা’ শিরোনামের প্রবন্ধে ‘মৃত মোসলেম বাওয়ালীকে’ শান্তি কমিটির সদস্য দেখানো হয়েছে, যিনি মন্নুজান সুফিয়ানের বাবা।
এখন কথা হচ্ছে, বাবার মানহানির কারণে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য তার সন্তান মানহানির মামলা করতে পারেন কি-না। কারণ প্রকাশিত বইয়ে মন্নুজান সুফিয়ান সম্পর্কে মানহানিকর কোনো বক্তব্য বা তথ্য আসেনি। এমন বক্তব্য শুনে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি আদালত রুল জারি করেছে বলে দাবি করেন এই আইনজীবী।
Leave a Reply