রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন
আসাদুজ্জামান শেখ,নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুলকাটিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১ টার সময় চুলকাটি বাজারে ব্যাংক, দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের সাধারণ মানুষের মাঝে জনসচেতনতামূলক জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার বিল্পবের ফলে অর্জিত স্বাধীনতা নতুন বাংলাদেশ গড়ার আঙ্গিকে এবং ৭২ এর সংবিধান বাতিল সহ ৬ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট বিতরণ করা হয়। ঘোষণাপত্রে ৬ দফা করার দাবি গুলো হলো: ১)জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং দ্রæত সময়ের মধ্যে আহতদের বিনামূল্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসা প্রদানের প্রতিশ্রæতি স্পষ্ট করতে হবে ২)ঘোষণাপত্রে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর নেতৃত্ব পরিস্কারভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। ৩)অভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনী ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে। ৪) ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্রæত্থানের ধারাবাহিকতা পরিস্কার করতে হবে। ৫) ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে এবং ৬)নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের মধ্য দিয়ে নাগরিক পরিচয় প্রধান করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতি থাকতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের একমাত্র প্রধান লক্ষ্য আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করা ছিল না; বরং গত ৫৩ বছরের বৈষম্য, শোষণ ও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলোপ করার লক্ষ্যে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দিতে হবে। সবশেষে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের রাজনীতিকে শক্তিশালী করুন। এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা সাধারণ মানুষের মাঝে একটি বার্তা পৌঁছে দেন তারা বলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একমাত্র প্রধান লক্ষ্য আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করা ছিল না; বরং গত ৫৩ বছরের বৈষম্য, শোষণ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলোপ করার লক্ষ্যে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দিতে হবে। গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণ একটি নজিরবিহীন ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়া শাসনের অধীনে চরম জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অবৈধ আওয়ামীলীগ সরকার জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে এসেছিল ঘোরতর এক বিপর্যয়। কর্মসংস্থান ছিল না, চাকরিতে ছিল দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি সহ নানা দুর্নীতি; ছিল না কথা বলার অধিকার। দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। গুম, খুন, ক্রসফায়ার, বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দি, আলেম সমাজ ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর অমানবিক নির্যাতনের মতো ভয়াবহ সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এ কাজে তারা রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণের মাধ্যমে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কার্যত তিনটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিল। আওয়ামী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা বারবার রাস্তায় নেমেছে। গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারকে উৎখাত করেছে। স্বৈরাচারী হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কুখ্যাতি অর্জন করেন। পালিয়ে যাওয়ার আগে দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা, প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের অঙ্গহানী করেছে খুনী হাসিনা ও তার দল। গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাখো জনতার উপস্থিতিতে এক দফা ঘোষণা করা হয়। সেখানে খুনি হাসিনার পতনের পাশাপাশি ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপেরও অঙ্গীকার করে। এর সহগ অর্থ হচ্ছে, আর কোনো শাসক ক্ষমতায় গিয়ে যেন হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে সেরকম রাষ্ট্রব্যবস্থা নিশ্চিত করা। শহীদ মিনারে ঘোষিত এক দফার ভিত্তিতে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার উৎখাত হয় যা সাম্প্রতিক বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এশিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে মুক্তিকামী জনগণের জন্য বাংলাদেশের এই অভ্যুত্থান এক নতুন দিশা ও প্রেরণা। দুনিয়ার যেখানেই মুক্তিকামী জনগোষ্ঠী স্বৈরাচার উৎখাত করেছে কিংবা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছে সেখানেই অভ্যুত্থানের শক্তি এ ধরনের ঐতিহাসিক অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে জনগণের সামনে ঘোষণাপত্র তুলে ধরেছে। ফরাসি বিপ্লব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আলজেরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিল্পবী জনগোষ্ঠীর ইতিহাসে আমরা এ ধরনের নজির দেখেছি। নিপীড়িত ও মজলুম জনগোষ্ঠীর লড়াই হিসেবে আমরাও জনগণের সামনে এ ধরনের একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি, যেন ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে সুরক্ষিত থাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত এই অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানকে টিকিয়ে রাখতে এবং বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে শুরু থেকেই আমরা একটি প্রোক্লেমেশন তথা ঘোষণাপত্র জারির দাবি জানিয়ে এসেছি। এ ঘোষণাপত্রই হবে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের বৈধতার উৎস এবং পরবর্তী সংবিধানের ভিত্তিমূল। জনগণের বিপুল সাড়া ও চাপের মুখে সরকার নিজে এ ঘোষণাপত্র জারির ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করতে বাধ্য হয়। আমরা অনতিবিলম্বে এ ঘোষণাপত্র জারির দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখতে চাই। আপনারা জানেন, ইতিমধ্যে আমরা ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে সরকারকে ১৫ দিনের মধ্যে ঘোষণাপত্র জনগণের সামনে তুলে ধরার সময় বেঁধে দিয়েছি। আমরা ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘোষণাপত্রটি প্রকাশ করার জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছি। উক্ত ঘোষণাপত্রে এ জনগোষ্ঠীর বিগত দুইশত বছরের লড়াই-সংগ্রামের স্বীকৃতি থাকতে হবে। বিগত ১৬ বছরের জুলুম-নিপীড়ন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করাসহ অর্থ পাচারের খতিয়ান থাকতে হবে।
Leave a Reply