মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন

বিশেষ বিজ্ঞপ্তি
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা  উপলক্ষে জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বাগেরহাট জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক
সংবাদ শিরোনাম :
বাগেরহাটে দুই বিএনপি কর্মীকে পিটিয়ে আহত : ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর লুটপাট মোহনপুরে সড়ক দূর্ঘটনা রোধে জেলা পুলিশের বিশেষ অভিযান আন্তর্জাতিক নারী নির্য়াতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন উপলক্ষে বাগেরহাটে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত মোংলা বন্দর ৭৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানকে সন্মাননা প্রদান বাগেরহাটে বকেয়া বেতনের দাবিতে পৌরসভা কর্মচারীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ বাগেরহাটে সড়কের পাশে বাজারের ব্যাগে রাখা নবজাতক উদ্ধার ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে চিতলমারীতে বিক্ষোভ মোংলায় গরীব কৃষকদের  ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা  কৃষিবিদ  শামীম উৎসব মুখর পরিবেশে ভট্রকনকপুর মাদ্রাসার আজীবন সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী তামিমকে মোংলায় সংবর্ধনা
রামপালে মহাজনের চড়া সুদে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা

রামপালে মহাজনের চড়া সুদে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা

 মেহেদী হাসান,(রামপাল)বাগেরহাট সংবাদদাতা
শুরু হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি তৈরির মৌসুম। শুঁটকি পল্লীতে ফের শুরু হবে কর্মব্যস্ততা। জীবনের ঝুঁকি ও ঋণের বোঝা নিয়ে মৎস্য আহরণে সমুদ্রে যাত্রা করছে জেলারা। জেলেরা সমুদ্রে মৎস্য আহরণকে ঘিরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে । ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় জীবনের ঝুকি নিয়ে চলেছে উপকূলের জেলে-মহাজনেরা। সাগরে যেতে যে যার মত প্রস্তুত করেছেন জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলার। কেউ কেউ গড়েছেন নতুন ট্রলার, আবার কেউ পুরাতন নৌকা মেরামত করে নিয়েছেন। প্রস্তুতি অনুযায়ী অনেকেই আগেভাগে রওনা দিচ্ছেন। অনেকেই আবার সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে চলে এসেছে  রামপালে নদীর পাড়ে। আজ সোমবার ( নভেম্বর) রাত ১২টার পরপরই দুবলার চরের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবেন জেলেরা। আগামী ৫ মাস তারা সেখানে থাকবেন। তৈরি করবেন বিভিন্ন জাতের মাছের শুঁটকি। দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা চর নামে হিন্দুধর্মের পূণ্যস্নান, রাসমেলা এবং হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। এই চরের মোট আয়তন প্রায় ৮১ বর্গমাইল। আলোরকোল, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয় এবং মেহের আলির চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত। দুবলার চরে তৈরি হয় জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে পাঁচ/ সাড়ে পাঁচ মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে। মেহেরআলীর খাল, আলোরকোল, মাঝেরচর, অফিসকেল্লা, নারিকেলবাড়িয়া, মানিকখালী, ছাফরাখালী ও শ্যালারচর ইত্যাদি এলাকায় জেলে পল্লী স্থাপিত হয়। এই কমাস তারা মাছকে শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। এখান থেকে শুঁটকি পাইকারী বাজারে মজুদ ও বিক্রয় করা হয়।
সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগ থেকে মাছ সংগ্রহের অনুমতি সাপেক্ষে বহরদার ও জেলেরা দুবলার চরে প্রবেশ করে থাকেন। দুবলার চর থেকে সরকার নিয়মিত হারে রাজস্ব পেয়ে থাকে। প্রতি বছর বিএলসি বা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট, ডিএফসি বা ডেইলি ফুয়েল (জ্বালানি কাঠ) কন্যাম্পশন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় বন বিভাগকে রাজস্ব প্রদান করে মৎস্য ব্যবসায়ীগণ সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি পান, এছাড়া আহরিত শুঁটকি মাছ পরিমাপ করে নিয়ে ফিরে আসার সময় মাছভেদে প্রদান করেন নির্ধারিত রাজস্ব।
শুধুমাত্র সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে ও নানা প্রতিকূলতায় ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি জেলে পরিবারগুলো। বরং দিন দিন তাদের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। ক্রমবর্ধমান ক্ষতির মুখে ইতোমধ্যে পূঁজি ও জাল-নৌকা হারিয়ে পেশা হারিয়েছেন অনেকে।
জেলেরা বলছেন মহাজনদের কাছ থেকে  চড়া সুদে টাকা নিচ্ছেন সুদের কারবারিদের কাছ থেকে। কেউবা টাকা গ্রহণে এনজিও, বিভিন্ন ব্যাংক ও সমিতি থেকে ঋণ করছেন। ঋণ, সুদের বোঝার সঙ্গে এমন দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই ৫ মাসের এক অনিশ্চিত জীবন শুরু করতে চলছেন তারা।
বহদ্দার কামরান বলেন, প্রতি বছর আমরা বিভিন্নভাবে ঋণ করে সমুদ্রে যাই। এবছরও পাঁচ লক্ষ টাকা ঋন করেই সাগরে যাচ্ছি। সরকারিভাবে আমরা তেমন কোন সাহায্য সহযোগীতা পাই না।
সুন্দরবনে জলদস্যু-বনদস্যুর উৎপাত ও মুক্তিপণ আদায়সহ আসাধু বনরক্ষীদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিলো এখন আছে কিনা তা জানিনা। তবে শুনেছি জলদস্যু-বনদস্যুর উৎপাত নাকি আবার বেড়েছে।
জেলে অলোক হালদার বলেন, বনবিভাগের পাস নিয়েই আমরা রওনা হই সাগর পাড়ের দুবলার চরে।
ধার দেনা করেই আমাদের যেতে হয় সাগরে। তবে অনেকে এবার সুদে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় স্বর্ণের জিনিস থুইয়ে টাকা আনতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন সাগরে দস্যুদের উৎপাত না থাকলেও এবার নাকি দস্যুদের দেখা যাচ্ছে। ঝড়-জলোচ্ছাসের প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই দুবলায় যাত্রা শুরু করি আমরা হাজার হাজার জেলে।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির রামপাল শাখার সভাপতি  বলেন, পাস পারমিট হাতে পাওয়ার পর আজ সোমবার সন্ধ্যায় পর সকল জেলেরা সমুদ্রু দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। জেলেরা এখান থেকে সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়েই যাবেন।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, বনবিভাগের কাছ থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে নিজ নিজ এলাকা থেকে রওনা হয়ে জেলেদেরকে সরাসরি যেতে হবে দুবলার চরে। চরে ঘর বাড়ি বা দোকান পাট তৈরী করার জন্য কোন সুন্দরবনের কোন গাছ কাঠতে পারবে না। গত শুঁটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল সাড়ে ৬ কোটির মত। এবারও আমাদের আশা আছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার মত রাজস্ব আদায়ের।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ – ২০২৪, www.chulkati24.com

কারিগরি সহায়তায়ঃ-SB Computers