রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
পি কে অলোক, নিজস্ব প্রতিবেদক
বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের রাখালগাছি ব্লকের সুনগর গ্রামের রফিকুল ইসলাম মোড়ল নামের একজন সুফল গম চাষি চলতি মৌসুমে সাদা জাতের বারি গম-২৮ চাষ করে তিনি এখন বেশ স্বাবলম্বি হয়েছেন। প্রতিবছর তিনি এই একই মৌসুমে গম চাষ করে বাম্ফার ফলন উৎপাদন করায় তাঁর দেখা-দেখি অনেক চাষিই এখন গম চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে কৃষির উপর নানা ধরনের প্রশিক্ষন গ্রহন করায় তিনি একজন সফল চাষি হিসাবে ব্যপক পরিচিতিও অর্জন করেছেন। এজন্য তিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অদিপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, খানপুর ইউনিয়নের ১নং যুগীডাঙ্গা গ্রামের সফল চাষি রফিকুল ইসলাম মোড়ল রাখালগাছি ইউনিয়নের রাখালগাছি বøকের সুনগর গ্রামে ২ বিঘা জমিতে সাদা জাতের গমের চাষ শুরু করেন। শুরুতেই তিনি গম চাষ নিয়ে নানাধরনের দিধা-দ্বন্দের মধ্যে পড়েন। কিন্তু তিনি পিছপা হওয়ার লোক নন। তাই তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে প্রনোদনা স্বরুপ মাত্র ৬০ কেজি গমের বীজ প্রনোদনা স্বরুপ পেয়ে তার ২বিঘা জমিতে তা বপন করেন। যদিও বীজ বপন করার কথা ছিল কাত্তিক মাসে। কিন্তু নানা প্রকার জটিলতার কারনে তিনি কাত্তিক মাসে তা বপন করতে না পেরে অগ্রহায়ন মাসে তা বপন করেন। বপন করার পর দুইবার তিনি ২০কেজি পটাশ ও ২০ কেজি ড্রেপ সার প্রনোদনা স্বরুপ পেয়ে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েন। তিনি বলেন স্বল্প খরচে অধিক ফলন পাওয়ার আসার তিনি এবার সাদা গমের চাষ করেছেন। ক্ষেতে ফলন হয়েছে অত্যান্ত ভাল। তিনি বলেন এক মন ধানের মূল্য ১১/১২শত টাকা, আর একমন গমের মূল্য ২থেকে আড়াই হাজার টাকারও বেশি হওয়ায় তাই তিনি গমের চাষ করেছেন। এবার তার জমিতে বিঘা প্রতি ২৫থেকে ৩০মন গম উৎপাদন হবে বলে তিনি আসা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তিনি প্রতিবছরই গম চাষ করেন। কিন্তু এবছর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপ্ত কুমার ঘোষের পরামর্শ অনুযায়ী স্বল্প জীবন কালের বারি গম-২৮ এর চাষাবাদ শুরু করেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধ্যান করে দেখা গেছে, রাখালগাছি বøকে তিনি ছাড়াও চয়ন কুমার দেবনাথ, মোঃ সেলিম মোড়ল ও রঞ্জন কুমার দেবনাথ সাদা গমের চাষ করছেন। তাদের ফলনও ভাল হয়েছে। তারা বলেন গম চাষে সেচ ও সারসহ অন্যান্য খরচ অনেক কম হওয়ায় তারা এবার গম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তারা আরো বলেন, গম চাষে ১০৮/১১০দিন তা ঘরে তোলা সম্ভব। যে করনে তারা সকলেই বারি-২৮ গমের চাষ করেছেন। রাখালগাছি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপ্ত কুমার ঘোষের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, এবছর আমাদের এই বøকে গমের লক্ষ্যমাত্রা নির্দ্ধরন করা হয়েছিল প্রায় .৫ হেক্টর, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে তা বেড়ে দ্বীগুন হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদিয়া সুলতানা ও অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তন্ময় দত্তের সাথে আলাপ করা হলে তাঁরা বলেন, আমাদের এই সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চলতি বছর গমের লক্ষ্যমাত্রা নির্দ্ধারন করা হয়েছিল ১২ হেক্টর। এবং তা পুরটাই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এধারা অব্যাহত রাখার জন্য তারা স্বঃস্বঃ এলাকার গম চাষিদের প্রতি উদ্যাত্ত আহবান জানান।
কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ধানের পরই দেশে যে খাদ্যটির চাহিদা বেশি সেটি হলো তথা গম। দেশের মানুষের বিশেষ করে শহরাঞ্চলে সকালের নাস্তার একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকে গমের আটা বা ময়দার রুটি-পরোটা। যদিও দেশে গমের চাষ যতটা প্রসার লাভ করার কথা ছিল ততটা হয়নি, তবুও যে পরিমাণ জমিতে গমের চাষ হয় সেই জমিতে আধুনিক পদ্ধতি মেনে চাষ করলে গমের ফলন বেশি পাওয়া যেতে পারে। কৃষি অফিস বলছে, গম বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণের তৃতীয় সপ্তাহ বা নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু কিছু কিছু জাত আছে যেগুলো কিছুটা তাপ সহনশীল, সেগুলো ডিসেম্বর মাসের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত বোনা যেতে পারে। তারা বলেছেন উঁচু ও মাঝারি দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য বেশি উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়ে থাকে। সাধারণত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি গম চাষের জন্য উপযুক্ত। তবে মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ করা যেতে পারে। গমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য জমি চাষ করার সময়ই প্রতি শতকে ৩০-৪০ কেজি জৈব সার প্রয়োগ করা ভালো। সেচসহ শেষ চাষের সময় প্রতি শতাংশে ৬০০-৭০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০-৭০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০-৪০০ গ্রাম এমওপি এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হয়। সেচসহ চাষের বেলায় চারার ৩ পাতা হলে প্রথম সেচের পর দুপুরে মাটি ভেজা থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশে ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়। অন্যদিকে সেচ ছাড়া চাষের বেলায় সব ইউরিয়া (শেষ চাষের সময়+উপরি প্রয়োগের সময় দেয়) সার একত্রে শেষ চাষের সময় অন্যান্য রাসায়নিক সারের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হয়। জমিতে বোরনের ঘাটতি দেখা দিলে বা বোরন ঘাটতি থাকলে প্রতি শতাংশে ২৫ গ্রাম করে বোরিক এসিড শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। যেসব জমিতে দস্তা সারের ঘাটতি থাকে এবং আগের ফসলে দস্তা সার ব্যবহার করা হয়নি সেসব জমিতে শতকপ্রতি ৫০ গ্রাম করে দস্তা সার প্রয়োগ করতে হয়। দস্তা সার শেষ চাষের সময় দেওয়া ভালো।
Leave a Reply