বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন
বাগেরহাট অফিস
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট জুড়ে দু-দিন ধরে বৃষ্টির কারনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। শীত ও বৃষ্টির সাথে মৃদু বাতাস ও গুমোট আবহাওয়ার কারণে আশঙ্কা বিরাজ করছে উপকূলবর্তী মানুষের মধ্যে। এদিকে শীত ও বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে ঝড়ের খবরে বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে থাকা নৌযানগুলো উপকূলে ফিরে এসেছে। বেশ কিছু নৌযান সুন্দরবনের মধ্যে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরের সকল কাজ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোঃ শাহাদাত হোসেন। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আঘাত হানলে করনীয় বিষয়ে জরুরী সভা করেছে জেলা প্রশাসন। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘূর্নিঝড় জাওয়াদ সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।জেলা প্রশাসক বলেন, টানা বৃষ্টির সাথেও শীতেরও তীব্রতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরুরী সভা করে জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘূর্নিঝড় জাওয়াদ এর প্রভাব থেকে মোকাবেলায় সর্তক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।সদর উপজেলার রিক্সা চালক নবির শেখ বলেন, গতকালকেও তেমন আয় করতে পারিনি। রাতভর ঝড়ের আতংকে ছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ঝড় হয়নি। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে সারাক্ষণ। আজকেও আয় না করতে পারলে পরিবার নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।
বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকার ভ্যান চালক মো. শাহজামাল বলেন, বৃষ্টি ও শীতের কারনে সারাদিন ভ্যান চালাতে পারিনি। ঝড়-বৃষ্টি সবকিছুতেই আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হই। জাওয়াদের কথা শোনার পর থেকেই আতংকে আছি।বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদীর পাশে সরকারী জমিতে ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী রাজিয়া বেগম বলেন, একে শীত তারপরে সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ের কথা শুনতেছি। কি হবে আল্লাহই ভালো জানে।
রামপাল উপজেলার মৎস্য চাষী নাজমুল শেখ জানান, নিচু এলাকায় আমাদের ঘের। দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। পানি ঘেরের পাড় প্রায় ছুই ছুই। এমন বৃষ্টি হতে থাকলে ঘের তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছি। ক্ষতি আমাদের পিছু ছাড়ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।ঝড়ের খবরে বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরা জেলে ইউনুস আলী বলেন, ঝড়ের খবর শুনে দ্রুত ট্রলার চালিয়ে সকালে লোকালয়ে চলে এসেছি। অন্যান্য জেলেরাও লোকালয়ে আসা শুরু করেছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরের সকল কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। জাহাজ আসতেছে, যাচ্ছে। পন্য বোঝাই ও খালাসও চলমান রয়েছে।তিনি আরও বলেন, ঘর্ণিঝড় জাওয়াদের খবর পাওয়ার পর থেকে আমরা ২৪ ঘন্টা মনিটরিং করছি। তবে ঘূর্নিঝড়টি গতি পরিবর্তণ করে উত্তর দিকে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবর অনুযায়ী ঘূর্নিঝড়টি নিম্মচাপে রুপ নিয়েছে। তারপরও আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ উপকূলে আসার আগেই দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ হিসেবে এটি সোমবার মধ্যরাতে ভারতের ওডিশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে দেশের বেশিরভাগ এলাকার আকাশ পরিষ্কার হতে থাকবে। এছাড়া তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার রয়েছে। দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বেড়ে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। সমুদ্রে অবস্থানরত নৌযান ও মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply