রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
দাকোপ সংবাদদাতা
চালনা বাজারের বিধবা নারী কৃষ্ণা রায়। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র প্রতিবন্ধি শিশু পুত্রকে নিয়ে পড়েন চরম আর্থিক দৈন্যতায়। বিভিন্ন জনের সহায়তায় ফুটপথে ভাজাপোড়া বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের প্রচেষ্টা তার।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাঁর প্রতি সদয় হয়ে করে দিয়েছেন একটি বিধবা ভাতার কার্ড। মোবাইল ব্যাংক নগদ এ্যাকাউন্টে তার নাম্বারে আসা ভাতার প্রথম কিস্তির ৩ হাজার টাকা তুলে নিয়ে গেছে অসাধু চক্র। চালনা সবুজপল্লী এলাকার বৃদ্ধ আফতাব খান। তার নিজ নামের ০১৯৮৮৭০২২১৫ নাম্বারে নগদ এ্যাকাউন্টে জমা হওয়া বয়স্ক ভাতার ৩ হাজার টাকা গত ২৩ জুন ২০২১ রাত সাড়ে ১০ টায় নগদের ০১৯০৬৪৯৩৪৪০ এজেন্ট নাম্বার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। টাকা উত্তোলনের পর থেকে ওই নাম্বারটি বন্ধ আছে। নিরুপায় হয়ে তিনি বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৯ জুলাই দাকোপ থানায় ৬৭৫ নং সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
দাকোপ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় পুত্রের স্কুলের উপবৃত্তির ২৮০০ টাকা নগদ এ্যাকাউন্ট থেকে অনুরুপভাবে তুলে নেয়ার অভিযোগ এনে দাকোপ থানায় জিডি করেছেন। পার চালনা গ্রামের বিধবা আমেনা বেগম। তার নগদ এ্যাকাউন্টে জমা হওয়া ভাতার সাড়ে ৪ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ এনে গত ১৯ আগষ্ট দাকোপ থানায় ৭১৫ নং সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এভাবে দাকোপের বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষের নগদ এ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও উপবৃত্তির লাখ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গোপন পাসওয়ার্ডের নাম্বার ব্যতিত কিভাবে অসাধু চক্র এভাবে গরীব অসহায় মানুষের ভাতা ও উপবৃত্তির টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন এখন সর্বত্র। এলাকাবাসীর মন্তব্য তাহলে সরকার প্রদত্ত ভাতার টাকা এমন অনিরাপদ নগদ এ্যাকাউন্টে কেন দেওয়া হচ্ছে!
এ ব্যাপারে নগদের খুলনা বিভাগীয় ক্লাষ্টার প্রধান সাইফুল আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি এমন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের প্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্থদের তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরন করছেন তারা নিশ্চয় টাকা ফেরত পাবেন।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে দাকোপে নগদের কোন প্রতিনিধি এ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা তো দূরে থাক, উল্টো ক্ষতিগ্রস্থরা সহায়তা চাইতে গেলে তাদের প্রতিনিধি হীরক করছেন দূর্ব্যবহার এমন অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ভাতা বা উপবৃত্তির টাকা ঢোকার পর ২/৩ দিন পর্যন্ত ওই চক্রটি অপেক্ষা করে। এ সময়ের মধ্যে সুবিধা ভোগী এ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট না করলে এরপর ঘটছে এমন ঘটনা। যে কারনে প্রশ্ন উঠেছে কখন টাকা ঢুকছে সেই তথ্য ওই চক্রটি পাচ্ছে কিভাবে?
তবে কি এর সাথে নগদ এ্যাকাউন্ট এবং ভাতা প্রদানকারীরা জড়িত এমন কথা আলোচিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার গরীব অসহায়দের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনতে সকল ধরনের ভাতা ও উপবৃত্তি প্রদান করে আসছেন। কিন্তু নগদের অনিরাপদ সেবার কারনে গরীব অসহায়দের সেই টাকা চলে যাচ্ছে অসাধু চক্রের পকেটে।
ভুক্তভোগীরা যে কোন মূল্যে ওই চক্রকে আইনের আওতায় আনার সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাতার টাকা ফেরত পেতে সরকার এবং প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply