রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
সিডর ও আইলা ক্ষতিগ্রস্থ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র এখন খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে অতিমাত্রায় খড়া ও নদী ভাংগনের কারনে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীর পানির লবনাক্ততা, যার ফলে নদীর পনি ব্যবহার ও খাবার অনুপযোগী হচ্ছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমের শুর“তেই দেখা দেয় এ সংকট। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন সহ পৌর এলাকায় খাবার পানির এ সংকট ভয়াবহতায় রুপ নিয়েছে। পানীয় জলের জন্য সর্বত্র হাহাকার বিরাজ করছে। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নলকুপে আর্সেনিক,অকেজো নলকুপ,অকেজ পিএসএফ এর কারনে এসংকট আরো প্রকট হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ সরকারি নলকুপ ও পিএসএফ অকেজো। পাশাপশি বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্মিত শত শত নলকুপও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মোরেলগঞ্জ পৌর সদরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসী বিশুদ্ধ পানির অভাবে অভাবনীয় দুভোর্গ পোহাচ্ছে। উপজেলার ৩০৯ টি সরকারি ও ৪৫ টি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশতে কোন টিউবওয়েল নেই। আর যেগুলোতে আছে তাও অকেজো অবস্থায় রয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশ ও তত্ত্বাবধায়নের অভাবে এসব নলকুপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। শত শত নলকুপের যন্ত্রাংশ ইতোপূর্বে চুরি হয়ে গেছে। একটি চোরাকারবারী চক্র এসব নলকুপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রাতের আঁধারে চুরি করে বিক্রি করছে। উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিউধরা, নিশানবাড়ীয়া, খাউলিয়া, বলইবুনিয়াসহ অধিকাংশ ইউনিয়নে এমৌসুমে পানিতে অতিরিক্ত লবনাক্তার কারণে পুকুরের পাণিয় জল পান করতে পারছে না এলাকাবাসী। এ ব্যপারে ভুক্তভূগী বারইখালী ইউনিয়নের উত্তর বারইখালী গ্রামের মো. মোতাহার হোসেন (৫০) বলেন, পানির কষ্টে মরে যাচ্ছি। ৩ মাইল পথ হেটে এক কলশি পানি আনতে হয়। এক কলশি পানি আনতে ২ ঘন্টা সময় লাগে। খাবার পানি অনতে তালুকদার বাড়ীর পুকুরে যেতে হয়। আমাদের এলাকায় বৃষ্টি নাহওয়ায় সকল পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। অপরদিকে নদীর পানি রবনাক্ত হওয়ায় তাখেতে পারছিনা। নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের আমরবুনিয়াগ্রামের পুস্প রানী বালা (২৫) বলেন, আমাদের এখন খাবার পানিতো ভালো থালাবান ধোয়ার মতন পানি নেই। চিংড়ি ঘের এলাকা হওয়ায় যেখানে যেটুকু পানি আছে তাও লবনাক্ত। সন্ধ্যার পড়ে ছেলে, মেয়ে নিয়ে ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলশি করে পানি নিয়ে আসি। খাউলিয়া ইউনিয়নের বড়পরী এলাকার প্রতিবন্ধি মো. বেল্লাল হাওলাদার (৩৫) বলেন, প্রতিদিন ভ্যানে করে পঁাচ মাইল পথ পাড়িদিয়ে পল্লীমঙ্গল সরকারী পুকুর থেকে পানি আনতে হয়। গত তিন মাস ধরে পানির কষ্টে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বে-সরকারী সংস্থা ডর্প পানিই জীবন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে খাবার পানি সংকট নিরসনের জন্য সরকারের সাথে একযোগে কাজকরে আসছে। হেলভেটাসের আর্থীক সহযোগিতায় ডর্প বিভিন্ন ইউনিয়নে সোলার পিএসএফ স্থাপন, পিএসএফ সংস্কার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের জন্য দরিদ্র পরিবারের মাঝে প্লাষ্টিক ট্যাঙ্কি বিতরণ করেছে। অপরদিকে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাবার কারনে প্রতিটি গ্রামের বাসিন্দারা দূর দূরন্ত থেকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে, নৌকায় চড়ে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেকে খোলা পুকুর খাল ও নদী নালার পানি পান করছে। সদর ইউনিয়ন ও পৌরবাসীকে খাবার পানির জন্য একমাত্র উপজেলা পরিষদের পুকুরের পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাও বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে গেছে। সকাল থেকে রাতভর এসবপুকুর থেকে সমান ভাবে পানি নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও পৌর সদরের কুঠিবাড়ি,এসএম কলেজ পুকুর থেকে ময়লাযুক্ত পানি হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারনে বিভিন্ন পানি বাহীত রোগ ,পেটের পীড়াসহ নানা রোগে ভুগছে শিশুসহ লোকজন। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মোরেলগঞ্জ সদর হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের একটি পুকুর শুকনো ,পিএসএফ নষ্ট। তীব্র খাবার পানি সংকট দেখাদেয়ায় গত সপ্তাহখানের ধরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ভ্রাম্যমান ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে ২ টি গাড়ী সাময়ীক ভাবে বিভিন্নস্থানে জনসাধারনের মাঝে পানি সরবরাহ করছে। মোরেলগঞ্জ প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও পানি সরবরাহের কোন ব্যাবস্থা করা হয়নি। ১৯৯৮ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হলেও গত ২৩ বছরে পৌর বাসীকে পানিও জলের সংকট থেকে উত্তরনের জন্য কোন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র অ্যাড. মনিরুল হক তালুকদার বলেন, ইতমধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রোকৌশল ও একটি সংস্থার সাথে কথা হয়েছে, আশাকরি আগমি জানুয়ারি নাগাদ কাজ পানির প্লান্টের জন্য কাজ শুরু করতে পারব উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সরকারীভাবে ডিফ টিউবঅয়েল বসানোর কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সম্ভভ হয়নি। মাটির নিচে পাথর বাজায় কাজ স্থগিত করতে হয়েছে। উপজের বিভিন্ন ইউনিয়নের বড়বড় পুকুরগুল খনন করে বৃষ্টিার পানি সংরক্ষণ করতে হবে। ইতমধ্যে জেলা পরিষদের উদ্যোগে ২২ টি পুকুর খনন করা হয়েছে এবং ওই সব পুকুরে পিএসএফ বসানো হয়েছে। উপকুলীয় অঞ্চলে পানির সমস্যটা দিনদিন প্রকপ হচ্ছে। উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের সরকারিভাবে ৪৮ টি ও বে-সরকারিভাবে ১৬ শ’ পানীয় জলের পুকুর রয়েছে। পিএসএফ রয়েছে প্রায় ১১’শ। এর মধ্যে ৩’শ টি চালু রয়েছে । অকেজো রয়েছে ৮ শতাধিক। ১০টি গভীর নলকুপের মধ্যে জিউধরা ইউনিয়নে একটি চালু রয়েছে। রেইন ওয়াটার হারবেষ্ট্রিং প্লান রয়েছে ৮০ টি । সদর ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামে চালু রয়েছে একটি রিংওয়েল (পাত কুয়া)। স্যালো টিউবয়েল রয়েছে ৩ হাজার ৬ শ’ ৭০ টি। ১০ বছর পূর্বের জরিপ অনুযায়ী স্যালো টিউবয়েল অকেজো রয়েছে ২ হাজার। ২০০৩ সালের আর্সিনিক জরিপ অনুযায়ী উপজেলা সব ইউনিয়নে কম বেশী আর্সেনিক চিহিৃত টিউবওয়েল রয়েছে। তবে বনগ্রাম ,হোগলাবুনিয়া, হোগলাপাশা ইউনিয়নের আর্সেনিক চিহিৃত টিউবওয়েল রয়েছে সবচেয়ে বেশি ও ভয়ানক আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তরের হিসাবের সাথে ব্যস্তবতার কোন মিল নেই। প্রায় হিসেবই কাগুজে কলমে। উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে মাইলের পর মাইল হাটলেও দু ’ একটি ছাড়া কোন সচল টিউবওয়েল দেখা যাবেনা। পৌর সদরের চিত্র একই। যেসব টিউবওয়েল সচল রয়েছে থালা বাসন ধ্ঁোয়া
Leave a Reply