রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

চুলকাটি অনলাইন টিভি ও নিউজ মিডিয়া, সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার। 
সংবাদ শিরোনাম :
ফকিরহাটে ১৫ পিস ইয়াবা সহ গ্রেফতার ১ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প রামপালে দুর্বৃত্তের অগ্নি সংযোগ; বিএনপির আরও ৪ নেতা গ্রেফতার “বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে নতুনধারার সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রকাশ ” ৩৪ দিনে ৪৮০ বাহন ও ১১৯ স্থাপনায় অগ্নি সংযোগ-ভাংচুর বাগেরহাটে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহীসহ মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ৩০ প্রার্থী রামপালে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ল বাস বিএনপির ১০ নেতা গ্রেফতার  রামপালে সংসদ সদস্য পদে মন্ত্রী হাবিবুন নাহারসহ ২ জনের মনোনয়ন পত্র জমা ইন্দোনেশিয়া থেকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা নিয়ে এম ভি আরভিকা মোংলা বন্দরে বাগেরহাটের রামপালে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন বাগেরহাটে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ তিন স্বতন্ত্রসহ ১৪ প্রার্থী
বাগেরহাটে পুরুষ শূন্য শতাধিক পরিবার

বাগেরহাটে পুরুষ শূন্য শতাধিক পরিবার

বাগেরহাট অফিস

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে হামলা ও গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শতাধিক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। পুরুষদের পাশাপাশি জীবন ও সম্মান বাঁচাতে নারী ও শিশুরাও এক ধরণের পলাতক জীবন-যাপন করছেন। আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না তারা। কেউ কেউ আবার এলাকা ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। পুরুষশূন্য পরিবারগুলোর মাঠের ফসলও ঘরে তুলতে পারছেন না প্রতিপক্ষের হুমকি-ধামকিতে। ফসলের পরিচর্যার জন্য শ্রমিকও যেতে পারছে না মাঠে। গত ০১ এপ্রিল মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মামুন শেখ ও কিবরিয়া শরীফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মামুন শেখের চাচা শাসন গ্রামের আসাদ শেখ নিহতের জেরে মামুন শেখের সমর্থকদের তান্ডবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে শাসন গ্রামে।

ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, নিহতের পরে মামুন শেখের সমর্থকরা এলাকার শতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর করে। মামুনের সমর্থকদের হামলা থেকে বাঁচতে অন্তত শতাধিক লোক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ০৩ এপ্রিল নিহত আসাদ শেখের মেয়ে মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ৮৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২জনকে আসামী করে মোল্লাহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলায় এজাহার নামীয় আসামী সাবেক ইউপি সদস্য মিকাইল হোসেন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও রক্ষা পায়নি মিকাইল চৌধুরীর বাড়িটি। ইউপি সদস্য প্রার্থী মামুন শেখের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক লোক হামাড় দিয়ে মিকাইলের ভবন ভেঙ্গে ফেলে। ভাংচুর ও লুটপাট করে ভবনের মধ্যেও। ভেঙ্গে ফেলে ফ্রিজ, টেলিভিশন, খাটসহ মূল্যবান সামগ্রী। ভয়ে পালিয়ে গেছে মিকাইলের স্ত্রী সন্তান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুধু মিকাইল চৌধুরীর বাড়ি নয়, শাসন গ্রামের সালাউদ্দিন চৌধুরী, এনামুল হোক চৌধুরী, একরামুল হোক চৌধুরী, কিবরিয়া শরিফ, ইউসুফ চৌধুরী, রফিক চৌধুরী, নাজমুল চৌধুরী, গাউস চৌধুরী, আমানত চৌধুরী, কালাম চৌধুরী, আবুল হোসেন চৌধুরী, এনামুল হোক চৌধুরী, লায়েব চৌধুরী, হানিফ চৌধুরী, কারিম চৌধুরী, আসাদ আলী সেখ, রজ্জব আলী সেখ, মিজান আলী সেখ, আশরাফ আলী সেখ, সাখাওয়াত ভূইয়া, মওলা সরদার, মর্তুজা সরদার, আইয়ুব আলী শিকদার, উজ্জল শিকদার, বাবু মোল্লা, আবেদ আলী ভূইয়া, ওবায়দুল ভূইয়া, হাসান ভূইয়া, বাচ্চু ফকির, শরিফুল ফকির, হাসান শরিফ, হুমায়ুন শেখ, ছবেদ মোল্লা, মুনসুর শরিফ, পলাশ শেখ, এশারত শেখসহ শতাধিক মানুষের বাড়িঘর ভাংচুর করেছেন ইউপি সদস্য প্রার্থী মামুন শেখের সমর্থকরা। পুরুষদের না পেয়ে ভাংচুরের সময় মারধরও করেছেন নারীদের। পুরুষ শূন্য পরিবারগুলোর নারীরাও রয়েছেন আতঙ্কে।

মিকাইল চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রওশন বেগম বলেন, আসাদ শেখ যে রাতে মারা যায়, ওই রাতেই তার ভাইপো মামুনের লোকজন এসে আমাদের অনেকের বাড়িঘর ভাংচুর করে। তালা ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে থাকা মালামাল লুট করে নেয়, যা নিতে পারেনা সেসব ভাংচুর করে রেখে যায়। পরবর্তী তিন দিন এসে আমার ভাসুরের এই ভবন ভেঙ্গে দিয়ে গেছে তারা। আসপাশের যাকে সামনে পেয়েছে তাকে মারধর করেছে। নারীদেরও বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি।মাহফুজা বেগম, হালিমা বেগমসহ আরও কয়েকজন বলেন, যেভাবে বাড়িঘর ভেঙ্গেছে তাতে বসবাস করার কোন অবস্থা নেই। ঘরের মধ্যে থাকা মূল্যবান মালামাল লুট করেছেন, যা নিতে পারেননি সেসব ভাংচুর করেছে। ঘরের চালও কুপিয়েছে। এসময় ঘরে থাকা কাপড় চোপড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল তারা। রান্নাঘরের হাড়ি-পাতিলসহ সব কিছু ভাংচুর করেছে তারা। স্বামী-ছেলে সবইতো পলাতক আছে। কি করব কিভাবে বাঁচব জানিনা।

পলাতক দিনমজুর নাসির মোল্লার স্ত্রী বেবি বেগম বলেন, হত্যার পর থেকে আমার স্বামী পলাতক রয়েছে। মাঠে কিছু ধান রয়েছে, তাতেও পানি দিতে পারছি না। বাড়ি এসে বলে গেছে পানি দিয়ে হবে কি ধান তো আমরা নিয়ে যাব। শুধু বেবি বেগম নয় আরও কয়েকজন এধরণের অভিযোগ করেন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসতীপর এক বৃদ্ধ বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে।মামলায় আসামী গ্রেফতার হবে, আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্ত এলাকার মানুষের উপর অত্যাচার, বাড়িঘর ভাংচুর, আগুন দেওয়া, নারীদের গায় হাত দেওয়া কোন সভ্যতা হতে পারে না। আমরা নিরীহ মানুষ হিসেবে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা চাই।এদিকে আসাদ শেখ হত্যা মামলায় চুনখোলা ইউনিয়ন পরিষ চেয়ারম্যান মুন্সি তানজিল হোসেনকে আসামী ও ভাংচুর করায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে প্রাণ ও সম্পদ হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মামুন শেখ বলেন, আমার কোন লোক কারও বাড়ি ঘর ভাংচুর করেনি। হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে না থাকলে ধানে পানি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

শতাধিক বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ছবি রয়েছে এগুলো কে করেছে এমন প্রশ্নে মামুন বলেন, হত্যাকান্ডের পরে কয়েকটি বসত বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে তা কে বা কারা ভেঙ্গেছে তা আমি জানি না।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০২০২১, www.chulkati24.com

কারিগরি সহায়তায়ঃ-SB Computers