বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ অপরাহ্ন
বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি গ্রাম। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বসবাস এই গ্রামে। গত (১৫ নভেম্বর) সকালে এই গ্রামের বাসিন্দা মৃত মহাদেব কুমার শীলের বাড়ীতে (নিজস্ব পূজা-অর্চনা করার স্থানে) হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী (কালী)র প্রতিমা উঠেছে চারদিকে এমন খবর ছড়িয়ে পরে। এমন খবরে মহাদেবের বাড়ীতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ,বৃদ্ধা ও শিশুসহ সকল বয়সের মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে। সময়ের সাথে সাথে বাড়ীর লোকজন বাঁসের বেড়া দিয়ে প্রতিমা ওঠার স্থানটি ঘিরে ফেলে, লিখে দেয়া হয় (বাঁসে কেউ হাত দিবেন না)। পাশেই রাখা হয়েছে একটি ঝুড়ি প্রতিমা দর্শনের পর (মনবাসনা পুরনের) প্রনামী হিসাবে লোকজন টাকা ফেলছে ওই ঝুড়িতে। এ যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র লালসালু উপন্যাস। শুধু পার্থক্য লালসালু বদলে এখানে ব্যবহার হয়েছে বাঁসের বেড়া। জয়গাছি গ্রামে মহাদেব শীলের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
কথা হয় জয়গাছি গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল শীলের সাথে। রাতারাতি এখানে কি ভাবে প্রতিমা উঠলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কি ভাবে এখানে প্রতিমা জেগে উঠলো আমার জানা নেই। আমি গিয়ে ছিলাম মহাদেবের বাড়ীতে মাটি খুড়ে প্রমিতা বেড় হয়ে উঠেছে, এমন কোন আলামত ও দেখতে পেলাম না। ঘটনাটি আমার কাছে বিশ্বাস যোগ্য মনে হয় না। মূলত সহজ সরল মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা আলম শেখ বলেন, মানুষের সরলতা কাজে লাগিয়ে এক প্রকার প্রতারনা করা হচ্ছে ওখানে। মহাবেদের স্ত্রী মায়া হচ্ছে এর মূল হোতা। রাতারাতি প্রতিমা জেগে উঠার গুজব ছড়িয়ে হিন্দু ধর্মের লোকদের অকৃষ্ট করা চেষ্টা আরকি। সাথে যোগ হয়েছে তার দুই ছেলে ও মহাদেবের ছোট বোন এর স্বামী সঞ্জিত কুমার শীল।
একই গ্রামের বাসিন্দা নজরুল শেখ, নুরু, তন্ময়সহ বেশ কয়েকজন জানান, রাতের আধারে প্রতিমা বসিয়ে, গুজব ছড়িয়ে বড় কালী ভক্ত সাজার চেষ্টা করছে মায়া রানী শীল। এগুলো প্রতারনা ছাড়া আর কিছুই না। প্রনামীর নামে আবার টাকাও তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভালো ব্যবসাও জমে উঠেছে।
এসময় কথা হয় মহাদেব কুমার শীল এর ছোট বোন কল্পনা রানী শীল (২৭) এর সাথে। তিনি বলেন, সর্ব প্রথম প্রতিমা উঠার বিষয়টি আমি দেখতে পাই। কি ভাবে দেখেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রবিবার সকালে উঠে আমাদের পূজা-অর্চনা করার ঘরে তাকিয়ে দেখি, ঘরের ভিতর “মা কালী” অবস্থান করছে। এসময় আমি বিষয়টি বাড়ীর অন্যদের জানালে, তারা এসে ঘরের দরজা খুলে দেখে “পিতলের একটি কলস, একটি কুলা, একটি মগসহ পূজা করার বিভিন্ন সড়ঞ্জামসহ “মা কালী” ঘরে অবস্থান করছে। অন্য কেউ এখানে রাতের আধাঁরে প্রতিমা রেখেছেন কি না এমন প্রশ্নে কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
মহাদেব কুমার শীল এর স্ত্রী মায়া রানী শীল (৪৫) বলেন, আমি “মা কালী’র” ভক্ত। মা আমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছেন তিনি আসছেন। তিনি আমার বাড়ীতে এসেছেন। স্বপ্নে আমাকে “ঘটপূজা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে” এটা সম্পন্ন করলেই “মা কালী” তার অলৌকিক ক্ষমতা দেখাবেন। অন্য কেউ এখানে প্রতিমা রেখেছেন কি না এমন প্রশ্ন করা হলে, চোখ বন্ধ করে “জয় মা কালী” বলে চিৎকার শুরু করলেন মায়া রানী। এসময় তিনি মাটিতে গড়াগড়ি দিতে থাকলেন। এগিয়ে এসে তার ছেলেরা লোকজনদের সরিয়ে দিতে লাগলেন। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তার ছেলেরা জানান, মায়ের উপর “মা কালী” ভড় করেছে।
মায়া রানী শীল এর ছেলে সঞ্জয় কুমার শীল (২৫) ও গোপাল কুমার শীল বলেন, কেউ পরিকল্পিত ভাবে এখানে প্রতিমা রেখেছেন কি না আমাদের জানা নেই। ঘটনা জানাজানির পর অনেকে দেখতে আসছে। কেউ আবার মনবাসনা পূরনের আশায় আসছে। “মা কালী’কে” প্রণাম শেষে প্রনামী হিসাবে অনেকেউ টাকা পয়সা দিচ্ছে।
বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে,এম আজিজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ধর্মভিরু লোকজনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছিল। যেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply