শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন
সোবহান হোসাইন : সালটা তখন ১৯৬৭। তৎকালীন দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারপ্রধান চুং হো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, রাজধানী সিউলের সঙ্গে দক্ষিণের শহর বুসানকে যুক্ত করতে নির্মাণ করবেন এক্সপ্রেসওয়ে। যে এক্সপ্রেসওয়ে বদলে দেবে কোরিয়ার দুর্বল অর্থনীতিকে। কোরিয়া পরিণত হবে শক্তিশালী অর্থনীতিতে। তার এ চিন্তাকে অনেকেই তখনকার সময় হাস্যকর গল্প মনে করতেন।তখন দক্ষিণ কোরিয়ার দুর্বল অর্থনীতির কারণে অর্থের জন্য দারস্থ হতে হয় বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দেশ ও সংস্থার কাছে। হাত পেতে সাহায্য চায় কিন্তু প্রত্যেকে কোরিয়াকে ফিরিয়ে দেয়। তারা দক্ষিণ কোরিয়াকে ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।তখন কোরিয়ান
সরকার বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা নিজেদের অর্থায়নে এ সড়কটি নির্মাণ করবে। সে অনুযায়ী কাজ শুরু করে। তখন সরকারের সে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ জনগণ; কিন্তু সরকারতার সিদ্ধান্তে অবিচল ছিল।সরকার তখনকার বাজেটের ২৩.৪% অর্থ এ মহাসড়কের জন্য বরাদ্দ দেয় এবং প্রকল্পের কাজ শুরু করে। মাত্র তিন বছর পর ১৯৭০ সালে সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়।আর এ সড়কটিই বদলে দিতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়ার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে। বুসান শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় হাজার হাজার কলকারখানা।আর এ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া দুর্বল অর্থনীতির দেশ থেকে পরিণত হয় টাইগার অর্থনীতির দেশে।তেমনি বাংলাদেশও যখন পদ্মা
সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং দক্ষিণের জেলাকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করার পরিকল্পনা করে, তখন সবাই ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিলেও শেষ মুহূর্তে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। অন্যান্য সংস্থা ও দেশের কাছে বাংলাদেশ সরকার হাত পাতে ঋণের জন্য। তারও ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন সরকার বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন অনেক অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ; কিন্তু সরকার তার সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হয়ে গেলে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। তখন আশা করা হয় যে, এ সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট এক পরিবর্তন বয়ে নিয়ে
আসবে। বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলাগুলোতে তখন নির্মাণ হবে হাজার হাজার কলকারখানা এবং রাজধানী ঢাকাকে সরাসরি যুক্ত করবে দক্ষিণের জেলাগুলো ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে। তখন প্রিয় বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে পরিণত হবে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাঙালি জাতি।
Leave a Reply