রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন

নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি রহস্যের জট খোলেনি মোংলা বন্দরে

নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি রহস্যের জট খোলেনি মোংলা বন্দরে

মোংলা প্র্রতিনিধি :  মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চার কন্টেইনার আমদানি নিষিদ্ধ পোস্তাদানা ও খালী কন্টেইনার আটকের ঘটনার মামলা প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি মোংলা বন্দরে ।পণ্য আমদানির কথা বলে খালি কন্টেইনার আনা ও অবৈধ এ পণ্যের সাথে জড়িত শিপিং এজেন্টসহ তিন আমদানিকারকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় রহস্যের জট খোলেনি এখনও।

তবে বন্দর ব্যবহারকারীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগেও এই চক্রের মাধ্যমে ঘোষণা বহির্ভূত বড় চালান মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খালাস হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি কাস্টমস’র শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ খতিয়ে দেখলে অবাক করার মতো তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট মোংলা কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইমদাদুল হক বাদি হয়ে চার কন্টেইনার বোঝাই পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার ১০/বি সোয়ারী ঘাট রোড, কোতয়ালীর মেসার্স তাজ ট্রেডার্স (যার বিন ০০২১৮৯২৩৩-০২-০৬) ও ০৬/১০ ডি চম্পাতলি লেন চকবাজারের মেসার্স আয়শা ট্রেডার্স (যার বিন ০০১৭৩১৮৬৪-০২-০৬) এবং শিপিং এজেন্টসহ আমদানি কারকদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ মতা আইনের ২৫-(বি)-১ (বি) ধারায় এবং খান জাহান আলী রোড খুলনার শিপিং এজেন্ট কিউসি লজিস্টিক লি. এর নামে ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় মোংলা থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এ মামলায় দীর্ঘ প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও শিপিং এজেন্ট বা আমদানিকারক কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে কারা এর সাথে জড়িত বা কি পরিকল্পনা করে এ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাসের চেষ্টা করা হয়েছিল তা অজানাই থেকে যাচ্ছে।

পণ্য আমাদানীকরা এ সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হলেও গ্রেফতার না হওয়ায় বন্দর ব্যবসায়ীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে কাস্টমস তাদের গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় তারা কাস্টমস এর কর্মকর্তা ব্যক্তিরা।মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কন্টেইনারবাহী বিদেশি জাহাজটি মালয়েশিয়া থেকে ছেড়ে এসে সিঙ্গাপুরে যাত্রা বিরতির পর গত ৯ আগস্ট মোংলা বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার খালাস শেষ করে দ্রুত চলে যায়। তবে এ জাহাজটি বন্দের নোঙ্গরের আগেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য এনে রাতের আধারে বন্দরের অসাধু লোকদের যোগসাজশে কন্টেইনার সীল ভেঙ্গে মালামাল লুকিয়ে রাখা হবে এমন গোপন সংবাদ আসে। এ মালামাল অন্যান্য আমদানিকৃত পণ্যের সাথে (শুল্ক কর পরিশোধিত) মিশিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের অগোচরে নিরাপত্তা ও ডেলিভারি পর্যায়ের কর্মচারীদের সাথে শিপিং এজেন্টের কর্মচারী আতাত করে উক্ত চোরাচালানকৃত মালামাল অপসারণ করা হবে এমন তথ্য রয়েছে কাস্টমসের কাছে।

তাই বন্দরের জেটিতে খালাসের পর পরই ওই আমদানীকারকদের আনা ৪টি কন্টেইনার শনাক্ত ও নজরদারিতে রাখে কাস্টমস।১২ আগস্ট আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠির মাধ্যমে কন্টেইনার ৪টি উন্মুক্তভাবে খুলে কায়িক পরীক্ষার করার জন্য চিঠি দেয়া হয় আমদানিকারকদের। কিন্তু আমাদানিকারক ও শিপিং এজেন্ট না আসায় গত ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ৪টি কন্টেইনার খুলে আমদানি নিষিদ্ধ ২ হাজার ৬৬৯ টি বস্তায় ৬৮ হাজার ২৬৫ কেজি পোস্তদানা পাওয়া যায়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১১ কোটি টাকা বলে মামলা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া শিপিং এজেন্ট মেসার্স কিউসি লজিস্টিক লি. ও মেসার্স সোবাহান আল্লাহ ট্রেডার্স এর নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে জাহাজ এমভি সান গিওরগিও (আমদানি পালা নং-২০২০/৫৩৫)  আমদানিকৃত কন্টেইনার নং-এইচ ডি এম ইউ-৬৫০৭০৫৭ এর মাধ্যমে প্যামম্পার, ডায়াপার ও ন্যাপকিং আমদানি ঘোষণায় আনা কন্টেইনার সংশ্লিষ্ট সকলের সামনে গত ১৮ আগস্ট কায়িক পরীক্ষার জন্য খুললে সেটি খালি কন্টেইনার পাওয়া যায়। কিন্তু কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় ওই আমাদানিকারক এ নামে কোন পণ্য আমদানি করেনি বা তার নামে কোন ব্যাংক একাউন্ট নাই।

তাই প্রতারণার দায় শিপিং এজেন্ট এর বিরুদ্ধে মোংলা থানায় মামলা করেন কাস্টমস। কিন্তু ১ মাস অতিবাহিত হলেও অধ্যবদি এ মামলার কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানায় বন্দর ব্যবহারকারীরা।তবে বন্দরে চোরা চালান বা আমদানি নিষিদ্ধ কোনো পণ্য এখান থেকে পাচার করতে হলে কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের উপর দিয়েই নিতে হবে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাইলে, চোরা চালান রোধে সকল সহায়তা দেয়া হবে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী জানায়, মোংলা বন্দরে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।মোংলা কাস্টমস হাউজ’র কমিশনার হোসেন আহমদ বলেন, আমি যোগদান করার পর থেকেই বন্দর জেটি এলাকায় আমদানিকৃত কন্টেইনারে কায়িক পরীক্ষা ছাড়া কোনো পণ্য এখান থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। আর যে সকল আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে, যাতে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের সাথে জড়িতরা দ্রুত গ্রেফতার হয়ে আইনের মাধ্যমে বিচারের আয়োতায় আনা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০২০২১, www.chulkati24.com

কারিগরি সহায়তায়ঃ-SB Computers