বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০১ অপরাহ্ন
মেয়াদ উত্তীর্ণের প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন এখনো হয়নি। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় পাঁচ বছরের স্থানে ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন মেয়র ও কাউন্সিলগণ। এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যেও নানা রকম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকালে মেয়র ও তার কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তবে মেয়র জুলফিকার আলী তার ও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করে অবিলম্বে প্রশাসক নিয়োগ, নির্বাচন ও মেয়রের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পৌরবাসী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কমকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি মোংলা পোর্ট পৌরসভায় অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোংলা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জুলফিকার আলী মেয়র নির্বাচিত হন। তারপর থেকে সীমানা জটিলতায় মামলা হওয়ায় এই পৌরসভায় আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে এ পৌরসভায় পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বেই মেয়াদ উত্তীর্ণ মেয়র জুলফিকার আলী তার নিজস্ব লোক দিয়ে স্বেচ্ছায় পরিকল্পনা করে মিথ্যা ও ভুয়া সীমানা জটিলতা এবং ওয়ার্ড বিভাজন চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করান। যার ফলে পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পাঁচ বছর ধরে কোনো প্রকার ভোটে অংশগ্রহণ না করেই দায়িত্ব পালন করতে থাকেন ২০১১ সালে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণ। এ সময় তারা সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করলেও জনগণের জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এই জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ ও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মোংলা পৌরসভার বাসিন্দা নারায়ন, পুলক, মাসুদ, কালীদাস, মুক্তা বেগম, ইকবাল হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, পৌরসভায় বসবাস করি। কিন্তু পৌরসভার তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা পাই না। কোন সেবার জন্য পৌরসভায় গেলে মেয়র-কাউন্সিলরদের পাওয়া যায় না। আসলে তারা তো ভোট ছাড়াই দীর্ঘদিন জন প্রতিনিধি হিসেবে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। তাই আমাদের সেবা দিতে তাদের কোন আগ্রহ নেই। পৌরবাসীকে প্রয়োজনীয় সেবা ও মোংলাকে আধুনিক পৌরসভা করতে অতি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানান তারা।
মানবাধিকার কর্মী শিউলী ইয়াসমীন অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে একটি কুচক্রি মহল মামলার অজুহাত দিয়ে মোংলা পৌরসভার নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে করে বিনা ভোটে দীর্ঘ সময় ধরে মেয়র ও কাউন্সিলর ক্ষমতায় থেকে সাধারণ মানুষের কল্যাণে তেমন এগিয়ে আসছে না।
মোংলার মাকরঢোন এলাকার নতুন ভোটার শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, নতুন ভোটার হয়েও পৌরসভায় এখন পর্যন্ত পছন্দের কোন প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ হয়নি। কবে ভোট দিতে পারব তাও জানি না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মোংলার সাধারণ সম্পাদক মো. নূর আলম শেখ বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার স্বার্থে সব জটিলতা নিরসন করে দ্রুত মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন দেয়া উচিত। নির্বাচন না হলে নেতৃত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। নিয়মিত নির্বাচন না হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান স্বৈরাচারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এটা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পন্থা নয়। এ দশ বছরে অনেক নতুন ভোটার হয়েছে, তাদের মধ্যে ভোট না দিতে পারার ক্ষোভ রয়েছে। সেবা বঞ্চিতদেরও ক্ষোভ রয়েছে এই জনপ্রতিনিধিদের উপর।
তবে সব জটিলতা নিরসন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির মোংলা শাখার সাবেক সভাপতি সুদান হালদার।
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমি নতুন নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এতে তিনি উল্টো আমি মেয়রের বিরাগভাজন হয়েছি।
মোংলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইজারাদার জালাল আহম্মেদ বুলবুল জানান, নির্বাচনের প্রায় দশ বছর পার হলেও মেয়র ও তার কাউন্সিলদের পৌরবাসীর কাছে কোন জবাবদিহি নেই।
বর্তমান মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, আমি নির্বাচনে বিশ্বাসী। নির্বাচন করেই জনগণের রায়ের জনপ্রতিনিধি হয়েছি। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মামলা দিয়ে নির্বাচন বানচালের ঘটনার সাথে আমি কোনোভাবেই জড়িত নন দাবি করে তিনি বলেন, র্তমান সরকার যেকোন সময় নির্বাচন দিলে আমি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরাজি বেনজির আহম্মেদ বলেন, মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে ছিলো। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে সে মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। পরবর্তীতে ওয়ার্ড সীমানা নির্ধারনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গেজেটের জন্য প্রেরণ করেছেন। এ গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হলেই এখানে ভোট অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ গেজেট প্রকাশ হতে পারে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি।
Leave a Reply