কেন্টাকি ডার্বি হর্স রেসের আগে এ ঘটনা ঘটেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
একইদিন নিউ ইয়র্ক রাজ্যের রচেস্টার শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করেছে।
স্থানীয় সময় বিকালে কয়েকশত প্রতিবাদকারী লুইভেলের হর্স রেসের ভেন্যু চার্চিল ডাউন্স ট্রাকের দিকে ‘নো জাস্টিস, নো ডার্বি’ শ্লোগান তুলে এগিয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা বার্ষিক এই প্রতিযোগিতা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছিল। সেই দাবিতেই বিক্ষোভকারীরা এমন শ্লোগান দেয় বলে ভাষ্য রয়টার্সের।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে কোনো দর্শকের উপস্থিতি ছাড়াই ওই দিন এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়।
পৃথকভাবে এনএফএসি নামে কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াদের একটি গোষ্ঠীর প্রায় ২৫০ জন সদস্য চার্চিল ডাউন্সের বাইরে সমবেত হয়। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি পুলিশ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
এনএফসির নেতা জন ‘গ্রান্ডমাস্টার জে’ জনসন ঘোড়দৌড় মাঠের বাইরে পাহারায় থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে অপমানজনক মন্তব্য করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, কিন্তু পরে কোনো ঘটনা ছাড়াই দলটি ওই স্থান ত্যাগ করে।
পাঁচ মাস আগে ‘নো-নক’ ওয়ারেন্টধারী মাদক তদন্তকারীদের একটি দল লুইভেলে ইমার্জেন্সি মেডিকেল টেকনিশিয়ান ব্রেওনা টেইলরের (২৬) ফ্ল্যাটে অভিযানে চালিয়েছিল। তখন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ এই নারী। তারপর থেকে লুইভেল বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়।
কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠী লুইভেল আরবান লিগের সভাপতি সাদিকা রেনল্ডস বলেছেন, রেস বাতিল করা হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন তারা, কিন্তু তা করা হয়নি; তারপরও টেইলরের মৃত্যুর জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের আটক করাসহ প্রতিবাদকারীদের দাবি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা গেছে।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, “আজ লুইভেলের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে শক্তির প্রদর্শনী দেখানো হয়েছে এটি বলার জন্য যে যথেষ্ট হয়েছে। আমাদের জীবনকে গুরুত্ব না দেওয়ায় আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।”

এর আগে সকালে লুইভেলের কেন্দ্রস্থলের একটি পার্কে ডানপন্থি প্রতিবাদকারীদের একটি গোষ্ঠী পিস্তল ও বড় বন্দুক নিয়ে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।
একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুই পক্ষের লোকজনই চিৎকার, চেঁচামেচি করে। এভাবে প্রায় ৪৫ মিনিট পার হওয়ার পর পুলিশ ওই পার্ক থেকে সবাইকে বের করে দেয়। কিন্তু তখনও চার্চিল ডাউন্সের সামনে প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল।
ডানপন্থি প্রতিবাদকারীদের দলটিতেও প্রায় ২৫০ জনের মতো বিক্ষোভকারী ছিল। তাদের সঙ্গে ‘দ্য অ্যাংরি ভাইকিং’ নামে পরিচিত ডিলান স্টিভেন্সও ছিলেন। স্টিভেন্স তার কথিত ‘প্যাট্রিয়ট’ নামক একটি গোষ্ঠীর নেতা। তার ওয়েবসাইট অনুযায়ী তারা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, পুলিশ, সামরিক বাহিনী ও অস্ত্র বহন করার অধিকারের সমর্থক।
বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও অন্যান্য সাজে সজ্জিত স্টিভেন্স সশস্ত্র অবস্থায় তার দল নিয়ে ওই পার্কে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
লুইভেল কুরিয়ার জার্নাল জানিয়েছে, তিনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকারীদের বলেছেন, তিনি তাদের বিরোধিতা করতে সেখানে যাননি, টেইলরের ঘটনায় ন্যায় বিচার না হলে ‘শহর জ্বালিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে’ জুলাইতে এনএফএসি নেতা জনসনের এমন হুমকির মোকাবেলা করতে তার দল সেখানে গিয়েছে।
২৫ মে মিনিয়াপোলিসে প্রকাশ্যে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বর্ণবাদ ও পুলিশ বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে।
শনিবার রাতে নিউ ইয়র্কের রচেস্টারে প্রায় দুই হাজার ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকারী মিছিল নিয়ে সরকারি ‘জন সুরক্ষা’ ভবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেলে পুলিশ লাঠি পেটা করে, পেপাল বল ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
প্রতিবাদকারীরা পুলিশদের দিকে বোতল, পাথর ও পটকা ছুড়ে মারে।
শুক্রবার ওরেগনের পোর্টল্যান্ডেও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ সেখানে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
Leave a Reply