শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিধবা নারীরা স্বামীর কৃষি জমির ভাগ পাবেন বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে।
আইনজীবীরা বলেছেন, ৮৩ বছরের পুরোনো হিন্দু বিধবা সম্পত্তি আইনে স্বামীর বসতভিটাতেই শুধু অধিকার দেয়া হয়েছিল। এখন হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষাপটে হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর সব সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
তাদের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারি নারীরা বলেছেন, এখন শত শত বছরের বৈষ্যমের বেড়াজাল থেকে বেরোনো সম্ভব হতে পারে বলে তারা মনে করেন।
খুলনায় গৌরীদাসী নামের একজন বিধবা নারী স্বামীর কৃষিজমি অধিকার দাবি করেছিলেন। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তার দেবর জ্যোতিন্দ্রনাথ মণ্ডল।
বিধবারা স্বামীর কৃষিজমির ভাগ পাবেন না-এই দাবি নিয়ে মি: মণ্ডল ১৯৯৬ সালে খুলনার আদালতে মামলা করেছিলেন।
কিন্তু খুলনার জজ আদালতের রায়ে হিন্দু বিধবাদের স্বামীর কৃষিজমিতে অধিকার দেয়া হয়েছিল। তখন এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছিল।
দীর্ঘদিন পর বুধবার হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর কৃষিজমিতে ভাগ পাওয়ার পক্ষেই রায় এলো।
রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি এটর্নী জেনারেল শাহ মো: আশরাফুল হক। তিনি বলেছেন, এই রায়ে হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর সব সম্পত্তিতেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।
“এই রায়ের ফলে কোর্ট যেটা বলছেন, একজন হিন্দু বিধবা নারী তার স্বামীর কৃষি জমিতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ভাগ পাবেন। আনুপাতিকহারে সম্পত্তির ভাগ পাবেন।”
৮৩ বছর আগের ১৯৩৭ সালের হিন্দু বিধবা সম্পত্তি আইনে স্বামীর বসত ভিটাতেই শুধু বিধবা নারীদের অধিকার ছিল।
তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারিরা বলেছেন, এমন আইন থাকলেও বিধবা নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই শুধু বসতভিটায় কোনভাবে থাকার অনুমতি পেতেন।
হিন্দু বিধবা নারীদের সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে আন্দোলনকারী দিপালী চক্রবর্তী বলেছেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর হিন্দু নারীদের বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোনভাবে বেঁচে থাকতে হয়।
“আসলে আমাদের বাংলাদেশে আমরা হিন্দু এবং বৌদ্ধ নারীরা সম্পত্তির কোন অধিকার পাই না। একেবারে বঞ্চিত। স্বামীর সম্পত্তির অধিকার নাই। বাবার সম্পত্তিতেতো কোন অধিকারই নাই।”
দিপালী চক্রবর্তী আরও বলেছেন, “একটা মেয়ে যখন বিধবা হয় এবং ছোট ছোট বাচ্চা থাকে, তাদের কিন্তু দূর্বিষহ জীবন।যেহেতু স্বামীর সম্পত্তির ভাগ পায় না। পলে মেয়েটাকে চলে আসতে হয় বাপের বাড়িতে। সেখানেও তার সম্পত্তির অধিকার নাই। মানে কি দূর্বিষহ জীবন তার কাটে।”
এখন হাইকোর্টের রায়ে শত বছরের বৈষ্যমের বেড়াজাল ভেঙে যাবে বলে মনে করেন দিপালী চক্রবর্তী।
“এই যে শত শত বছরের বৈষ্যমের বেড়াজাল, সেটা দূর হওয়ার একটা প্রথম সিঁড়ি মনে করছি হাইকোর্টের এই রায়কে।আমরা এখন পা দিচ্ছি সেই সিঁড়িতে। আমরা এই রায়কে খুবই ইতিবাচক এবং আশাব্যঞ্জক হিসাবে দেখছি।”
একইসাথে আন্দোলনকারিরা বলেছেন, আদালতে এই রায় দিয়েছে। কিন্তু তা আইনে রুপ দিতে হবে। এখন সরকার সেই পদক্ষেপ নেবে-সেটাই তাদের আশা।
BBC Bangla
Leave a Reply