শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বলছে, ঢাকা শহরের আনুমানিক ৬০ হাজারের মতো বেওয়ারিশ কুকুর থাকতে পারে। তবে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, তহবিলের অভাবে গত কয়েক বছর ধরে বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচী বন্ধ রয়েছে। যার কারণে ঢাকা শহরের কুকুরের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
যদিও এই সংখ্যার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছে প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তাদের হিসাবে ঢাকার দুই সিটিতে মোট ৩৭ হাজার কুকুর রয়েছে।
এদিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বেওয়ারিশ কুকুরের কারণে নানা ধরণের সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছেন।
রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা ফারজানা জেরিন শ্রাবন্ত। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, এমনিতেই কুকুর ভয় পান তিনি। তার উপর তার বাসার গলিতে ১০-১২টি কুকুর সারাক্ষণই থাকে।
“বাজার করে ফিরতে গেলে, হাতে ব্যাগ থাকলে এই কুকুরগুলো প্রায়ই পিছু নেয়। বাজারের ব্যাগগুলো ধরার চেষ্টা করে।”
তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর বাসায় ঢোকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি চলতি রিক্সা বা যানবাহনেও কুকুর লাফিয়ে উঠে পড়ে বলে জানান ফারজানা জেরিন শ্রাবন্ত।
একই ধরণের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তেজগাঁওয়ে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকেন আতিকুর রহমান।
তিনি জানান, বেওয়ারিশ কুকুরের কারণে রীতিমত অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন তারা। কিছুদিন আগে তার পোষা খরগোসটিও প্রাণ হারিয়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের হাতে।
“হলের কর্মচারীরা মুরগি পালে, সেই মুরগির বাচ্চাগুলোও কুকুর খেয়ে ফেলে।”
তিনি বলেন, আগে সিটি কর্পোরেশনে ফোন দিলে তারা ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু বর্তমানে সেটিও নেই।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বলছে, তহবিলের অভাবে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচী বন্ধ থাকায় গত কয়েক বছরে শহরে কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। বেওয়ারিশ কুকুরের সমস্যার কারণে এর আগে ৩০ হাজার কুকুর সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
তবে প্রাণীকল্যাণ বিষয়ক সংগঠনগুলোর বিরোধিতার পর সেটি আর কার্যকর হয়নি।
এনিয়ে ডিএসসিসির ভেটেরিনারি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, নাগরিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে কুকুরগুলো সরিয়ে নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু সেটি আর এখন নেই।
তিনি বলেন, “কুকুরের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। মেয়র সাহেব এ বিষয়ে অবগত আছেন। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।”
কুকুর সরিয়ে নেয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠে পশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
আজ বুধবার রাজধানীর নগর ভবনের সামনে এক মানববন্ধন করে তারা। সেখানে বলা হয় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কুকুর নিধন এবং অপসারণ বেআইনি।
এই মানববন্ধনে যোগ দেন পশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার-প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্থপতি রাকিবুল হক এমিল।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, কুকুর অপসারণ করে ঢাকা শহরে কুকুর কমানো সম্ভব নয়। এর পরিবর্তে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচী চালু করতে হবে যাতে বংশবৃদ্ধি বন্ধ হয়।
“কুকুরকে বন্ধ্যাত্বকরণ টিকা দিলে কুকুরগুলো আর বেশি লাফালাফি বা চঞ্চল হয়ে ওঠে না। এটা কুকুরের স্বভাব। ফলে বিশৃঙ্খলাও হয় না।”
পাশাপাশি কুকুরের সহাবস্থানের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রচারণা চালানো উচিত বলে মনে করেন মি. হক।
এদিকে নগরপরিকল্পনাবিদরা বলছেন, শহরের রাস্তা-ঘাটে বেওয়ারিশ কুকুর যত্র-তত্র ঘুরে বেড়ানোটা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি ডেকে আনতে পারে।
কুকুর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের উল্লেখ করে তারা বলছেন, প্রয়োজনে পশুপ্রেমীসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, “বিশ্বের কোন সভ্য দেশেই রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে কুকুর ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় না। এটা শিশু, নারী, বয়স্ক এমনকি প্রাপ্ত বয়স্ক পুরষদের জন্য অসুবিধার হতে পারে। তারা ভয় পেতে পারে।”
তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিতে হবে কারণ এটা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশে এই দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের।
তবে কুকুরের বাঁচার অধিকার আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন তা হতে হবে, স্বাস্থ্যসম্মত এবং প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী।
বেওয়ারিশ কুকুর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, পশু সম্পদ বিভাগ ছাড়াও প্রাণী কল্যাণে কাজ করা সংগঠনগুলোর সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে পারে।
আর এক্ষেত্রে প্রাণী কল্যাণ সংগঠনগুলোরও এবিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে সহায়তা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply