বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন

বিশেষ বিজ্ঞপ্তি
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা  উপলক্ষে জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বাগেরহাট জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক
সংবাদ শিরোনাম :
মোংলায় এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগে সহপাঠি কলেজ ছাত্র আটক, থানায় মামলা   চুলকাটি প্লন্টিং ফর ফিউচার এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন বাগেরহাটে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স বাগেরহাটে ডিবিসি নিউজের সাংবাদিককে ‘নব্য বিএনপি-জামায়াত’ সমর্থকদের মারধর বাগেরহাটে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত বাগেরহাটের ফকিরহাটে ইজিবাইক পিকআপ সংঘর্ষে শিক্ষিকাসহ নিহত-৪ বাগেরহাটে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার রামপালে পর্ণগ্রাফি আইনের মামলা করায় বাদীকে হুমকি  রামপালে কৃষকের জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ রামপালে জোরপূর্বক জমি দখল নিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ
সাত দশক পর নতুন ‘জমিদারের’ আবির্ভাব

সাত দশক পর নতুন ‘জমিদারের’ আবির্ভাব

জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির প্রায় সাত দশক পর সুন্দরবন অঞ্চলে আ. সামাদ চাপরাসি ওরফে আ. সামাদ হাওলাদার নামে নতুন এক ‘জমিদারের’ আবির্ভাব হয়েছে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছে তিনি দাবি করছেন, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার সব জমির মালিক তিনি। তাঁর কাছ থেকেই এসব জমি নতুন করে বন্দোবস্ত নিতে হবে। খাজনাও দিতে হবে তাঁকে। এভাবে গোপনে কয়েক বছরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েও নিয়েছেন তিনি।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, কয়েক বছর ধরে এ ধরনের প্রতারণা চললেও প্রশাসন ছিল অন্ধকারে। এমনকি শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলছেন, আ. সামাদকে বিধি মোতাবেক সহযোগিতা দিতে জেলা প্রশাসন থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ওই চিঠি নিয়ে আ. সামাদ তাঁর (ইউএনও) কাছে এসেছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের পিসি বাড়ইখালী গ্রামে নিজ বাড়িতে ‘লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেট’-এর সদর দপ্তর বানিয়েছেন সামাদ। শরণখোলায় খোলা হয়েছে শাখা অফিস। এই দুই কার্যালয় খুলে নিয়োগকৃত এজেন্টের (দালাল) মাধ্যমে এস্টেটের সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছিল। সদস্য ফি নেওয়া হয় তিন থেকে আট হাজার টাকা। এ ছাড়া নিরীহ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গোপনে ভয়ভীতি দেখানো হয়। বলা হয়, জমিতে থাকতে হলে ‘লর্ড এস্টেট’ থেকে নতুন করে বন্দোবস্ত নিতে হবে। জমি চাষাবাদেও বাধা দেয় দালালরা। এমনকি পরবর্তী সময়ে সব জমির খাজনাও তাদের এস্টেটে জমা দিতে হবে বলে প্রচার করা হয়।

একসময় মাছ বিক্রি করে সংসার চলত এই ‘জমিদারের’। দুই-তিন বছর ধরে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ দিয়ে বানিয়েছেন কাঠের বিশাল দোতলা ঘর। প্রতি শুক্রবার সেখানে আসর বসে। এদিকে শরণখোলায় স্থাপিত ‘সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেট’ নামের কথিত অফিসটি গত বুধবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। অপসারণ করা হয় সাইনবোর্ড। এ ছাড়া জনসাধারণকে প্রতারণার ফাঁদে না পড়ার জন্য মাইকিংও করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পিসি বাড়ইখালী গ্রামের আকবর আলী চাপরাসির (হাওলাদার) ছেলে আ. সামাদ হাওলাদার। তিনি প্রাদেশিক সরকারের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী নিজেকে সুন্দরবন লর্ড চিরস্থায়ী প্রজাস্বত্ব এস্টেটের মালিক ঘোষণা করেন। এ ছাড়া নিজেকে তৎকালীন খুলনা জেলার অধীন সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার সব জমির মালিকও দাবি করেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শরণখোলার রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মুক্তা মুন্সি, মোজাম্মেল হোসেন, গোলাম রাব্বি, মাছের খালপাড়ের লাইলী বেগম, উত্তর রাজাপুর গ্রামের আজিজ হাওলাদার, রহমান খান, লাকুড়তলার রেকসোনা বেগম, খাদা গ্রামের মাহামুদা বেগম, ধানসাগর ইউনিয়নের আসাদ জমাদ্দার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।

জানা যায়, উত্তর কদমতলা গ্রামের সাইফুল মোল্লা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে সদস্য ফি হিসেবে আট হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। ওই গ্রামের আরো আটজনের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। খোন্তাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজু সরদার জানান, আ. সামাদ নিজে এস্টেটের সদস্য হওয়ার জন্য তাঁর কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু জানান, সামাদের দাদা আফসার চাপরাসি ছিলেন এ অঞ্চলের তৎকালীন জমিদার অম্বিকা চরণ লাহার কাচারির পিয়ন। জামদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার সময় নাকি তিনি সব জমিদারি সামাদের দাদার নামে লিখে দিয়েছেন।

শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) রাহিমা আক্তার বলেন, ‘শুরুতে এ বিষয়ে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এখন প্রশাসনের নজরে এসেছে।’

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘তাঁদের অফিস সিলগালা করে সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। শরণখোলায় এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ চালালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযুক্ত আ. সামাদ হাওলাদার বলেন, ‘জমিদারি আমলের কাগজপত্র ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এ অঞ্চলের জমির মালিক আমি। আমার কাছ থেকে সবাইকে জমি বন্দোবস্ত নিতে হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ – ২০২৪, www.chulkati24.com

কারিগরি সহায়তায়ঃ-SB Computers