বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন

বিশেষ বিজ্ঞপ্তি
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা  উপলক্ষে জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বাগেরহাট জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক
সংবাদ শিরোনাম :
বাগেরহাটে মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধ, মুসল্লীদের মানববন্ধনে সন্ত্রাসীদের হামলা, আহত-১ মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চয়তায় আরিফা ইসলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট ও সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য: আল্লামা মামুনুল হক চুলকাটিতে দিনব্যাপী চক্ষু শিবির ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত বিজিবি’র অভিযানে মাদক ও ভারতীয় পন্য আটক বাগেরহাটে বিএনপির কমিটি আওয়ামী লীগ কর্মীদের অর্ন্তভূক্তির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বাগেরহাটে সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকারের সহযোগিতায় জমি দখলের চেষ্টা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শীতবস্ত্র বিতরণ ও মেডিকেল ক্যাম্পেইন চুলকাটি টিভি ও নিউজ মিডিয়া © চুলকাটি টিভি ও নিউজ মিডিয়া © চুলকাটি টিভি ও নিউজ মিডিয়া ফকিরহাটের লখপুর এলাকায় তুলা ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড…..বিস্তারিত আসছে…
ব্যাংকিং সেবার নতুন সম্ভাবনা উপশাখা

ব্যাংকিং সেবার নতুন সম্ভাবনা উপশাখা

ব্যাংকিং খাতকে বলা হয় অর্থনীতির ধারক ও বাহক। কোটি কোটি মানুষের সঞ্চয়ের শেষ ভরসা হলো ব্যাংক। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আর্থিক খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক খাত। এ খাতের আওতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক সেবামান। ব্যাংকিং ব্যবস্থা হচ্ছে আধুনিকায়ন। মানুষ দ্রুত ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় চালিকা শক্তি হলো ব্যাংকিং খাত। অর্থ গচ্ছিত রাখা, অর্থ লেনদেন করা, বিভিন্ন ধরণের ঋণসেবা প্রদান, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, এসএমই-এর উন্নয়নসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রায় সব ব্যাংকই ছিল রাষ্ট্রায়াত্ব। পাশাপাশি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোও ছিল সরকারি। অর্থনৈতিক যাবতীয় লেনদেন ছিল এ ব্যাংকগুলোকে ঘিরেই। পরবর্তী সময়ে কিছু সরকারি ব্যাংককে আবার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। আশির দশক থেকে অর্থনীতিতে বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু

মানুষের দ্বারগোড়ায় এখন ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক চালু করেছে উপশাখা এবং ইতোমধ্যে ২১টি ব্যাংককে উপশাখা চালুর অনুমতি দিয়েছে। আগে যা ব্যাংকিং বুথ নামে পরিচিত ছিল, তা–ই এখন উপশাখা। এতে কম খরচে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তৈরি হচ্ছে নতুন গ্রাহক, বাড়ছে আমানত। ফলে ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার নতুন সম্ভাবনা হয়ে উঠছে উপশাখা। এই উপশাখা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অগ্রগতিকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকার ও বিশ্লেষকেরা। এর আগে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়, যা ইতিমধ্যে বড় আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। উপশাখাগুলো পরিচালিত হচ্ছে সরাসরি নিকটবর্তী ব্যাংক শাখার অধীনে।

উপশাখা হলো ব্যাংকের শাখার আদলে ছোট পরিসরের ব্যবসাকেন্দ্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষায় উপশাখা হলো সময়ে সময়ে নির্দেশিত নীতি পদ্ধতির আলোকে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের কোনো পূর্ণাঙ্গ শাখার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত স্বল্পব্যয়ী ব্যবসা কেন্দ্রকে বুঝায়। প্রতিটি উপশাখা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিকটবর্তী কোনো শাখার নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হয়। নিয়ন্ত্রণকারী শাখা থেকে উপশাখার ন্যূনতম দূরত্ব হতে হয় কম-বেশি এক কিলোমিটার। জেলা শহরের বাইরে উপশাখা স্থাপনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী শাখা থেকে নিয়মিত যোগাযোগ, নগদ অর্থের সহজ ও নিরাপদ পরিবহন এবং সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে শাখা থেকে এর দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়। উপশাখা থেকে ব্যাংকের বিদ্যমান এজেন্ট আউটলেটের দূরত্ব মেট্রোপলিটান এলাকার ভেতরে ও বাইরে যথাক্রমে ৩ ও ৫ কিলোমিটার বজায় রাখতে হয়। উপশাখার ফ্লোর স্পেস হবে অনধিক ১০০০ বর্গফুট এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ২ জন, সর্বোচ্চ ১০ জন কর্মকর্তা নিযুক্ত হবে।

কম লোকবল ও সাজসজ্জার কারণে খরচও কম। এর ফলে ব্যাংকগুলো উপশাখা স্থাপনে দিনে দিনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তার মতো উপশাখার নগদ টাকা জমা ও ক্যাশে থাকা টাকার পূর্ণ বিমা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে উপশাখায় ভল্ট স্থাপন করা যাবে। এসব ব্যবসায় কেন্দ্র চালু করতে হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উপশাখায় নিরবচ্ছিন্ন ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামো থাকতে হবে। কম খরচে আর্থিক সেবার জন্য একটি শাখার অধীনে কাজ করে উপশাখা। এসব উপশাখা থেকে বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছাড়া সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবমতে, সারা দেশে ইতিমধ্যে ২১ ব্যাংকের কয়েকশ উপশাখা চালু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি উপশাখা খুলেছে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। ব্যাংকটি সারা দেশে ১০৫টি ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ে উপশাখা স্থাপন করেছে। এর বাইরে ওয়ান, অগ্রণী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, প্রিমিয়ার, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মিডল্যান্ড, ঢাকা, ট্রাস্ট, শাহ্‌জালাল ইসলামী ও ইস্টার্ণ ব্যাংকও উপশাখা খুলেছে।

উপশাখা থেকে ব্যাংকিংয়ের প্রায় সব সুবিধাই পাওয়া যাচ্ছে। উপশাখাকে স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবার আউটলেট হিসেবে বিবেচনা হয়। সে হিসেবে প্রচলিত শাখা স্থাপনের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন ব্যয় সীমার চেয়ে উপশাখা স্থাপনের ব্যয় এবং প্রচলিত শাখা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাংকিং সেবার জন্য নির্ধারিত ফি, চার্জ, কমিশনের চেয়ে ব্যাংকিং বুথে সেবা প্রদানের ফি, চার্জ, কমিশন ইত্যাদি কম ছাড়া বেশি হবে না। উপশাখার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে আর্থিক সেবা সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবা আউটলেটের মাধ্যমে অধিকতর আর্থিক সেবা ভুক্তি নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সবাইকে ব্যাংকিং সেবায় আনতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর একটি হলো উপশাখা। যার মাধ্যমে একেবারে গ্রামে গিয়ে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া যাচ্ছে। সবার ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত হলে দেশ এগিয়ে যাবে এবং যার সুফল পাবে আপামর সাধারণ সবাই। দেশের গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হওয়ার দাবি রাখে। বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, বেসরকারি এবং বিদেশি মিলিয়ে মোট ৬২টি ব্যাংক ব্যবসায়রত রয়েছে।

এক সময় ব্যাংকের ব্যবসা হিসেবে শাখা ব্যাংকিং, কৃষি শাখা, এসএমই শাখা, বুথ (কালেকশন বুথ, ফাস্ট ট্রাক, সেবাঘর ও ইলেক্ট্রনিক বুথ) ও ব্যবসা উন্নয়ন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্বল্প ব্যয়ে ব্যাংকিং সেবা কীভাবে মানুষের নাগালে পৌঁছানো যায় তারই আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং বুথ স্থাপন সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। এতে বলা হয়, ব্যাংকিং বুথের আয়তন হবে এক হাজার বর্গফুটের মধ্যে। এরপরই ব্যাংকগুলো বুথ স্থাপন জোরদার করে। উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর ২০১৯ বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারির মাধ্যমে ব্যাংকিং বুথকে উপশাখায় রূপান্তর করে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তা এখন বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত। সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। এই এগিয়ে চলা শিক্ষিত, অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত কৃষক, গার্মেন্টস কর্মী, ব্যাংকার, সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা ও সর্বস্তরের পেশাজীবী এবং শ্রমিকদের হাত ধরে। তাদের কারণেই সম্ভব হয়েছে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা। যে বাংলাদেশকে আগে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছিল সেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের সম্ভাবনা বলে চিহ্নিত করেছেন ব্রিটিশ ও নরওয়ের অর্থনীতিবিদগণ। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারে। লন্ডনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ লিখেছে, ২০৫০ সালে প্রবৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশ পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি এবং উপশাখা অর্থনীতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিবে বলে অনেকের বিশ্বাস। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যাংকিং সেবায় উপশাখা নতুন সম্ভাবনার মাত্রা যোগ করেছে।

লেখক: ব্যাংকার ও কলাম লেখক, সতিশ সরকার রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ – ২০২৪, www.chulkati24.com

কারিগরি সহায়তায়ঃ-SB Computers