বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন
শুরুটা কঠিনই হয়েছিল জো বাইডেনের জন্য। ফেব্রুয়ারির শীতে আইওয়া ককাসের ভোটের ফলাফল দেখে মুষড়ে পড়েছিলেন। ২০২০-র প্রেসিডেন্ট পদে তার প্রার্থী হবার সম্ভাবনা শেষ পর্যন্ত টিকবে কিনা তা নিয়ে বড় রকম সংশয় দেখা দিয়েছিল।
এক কথায়, ফেব্রুয়ারিতেও তিনি ছিলেন হোয়াইট হাউসের দৌড়ে একজন পরাজিত ব্যক্তি।
দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে হোয়াইট হাউসে যাবার যে স্বপ্ন জো বাইডেন বহুদিন থেকে লালন করে আসছেন, তা পূরণ হবার জন্য এটাই ছিল সম্ভবত তার শেষ চেষ্টা।
প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দলের পূর্ব-বাছাই প্রক্রিয়া – যাকে বলা হয় প্রাইমারি নির্বাচন – তার শুরুর পর্যায়ে প্রচারণার সময় মি.বাইডেনকে এবার দেখা গেছে আবেগপূর্ণ কথাবার্তা বলতে। তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে তার ছেলের মৃত্যুর কথা বলেছেন, বলেছেন তার ছেলেবেলার কথা, অভাব অনটনের পরিবারে তার বেড়ে ওঠার কথা। তবে জনগণকে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন: “সবসময়ই আশা আছে।” এটাই তার বিশ্বাস।
বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাইমারিতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও তাকে রীতিমত বেগ পেতে হয়েছে। তবে তার ব্যক্তিসত্ত্বার পরিচয় উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রচারণা সভায় তার আবেগপূর্ণ আবেদন থেকে। তার মনমানসিকতা, তার রাজনৈতিক জীবনে ব্যক্তিগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে মানসিক আঘাতের জায়গাগুলো এবং যেসব রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে তার একটা ছবি পরিষ্কার হয়েছে এসব প্রচারণায়।
ছবির উৎস, Getty Images
“আমি ভাগ্য মানি – ভাগ্যের ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস,” মি. বাইডেন ১৯৮৯ সালে বলেছিলেন ন্যাশানাল জার্নাল নামে সরকারের একটি উপদেষ্টা সংস্থাকে। “আমার ব্যক্তিগত জীবন কখনই আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলেনি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে আমি যেটা চেয়েছি, সেটা কীভাবে যেন হয়ে গেছে- একটা অদৃশ্য হাত সেটা ঘটিয়ে দিয়েছে।”
ঘনিষ্ঠ প্রিয়জনদের অকালমৃত্যুর অভিজ্ঞতা হয়েছে মি. বাইডেনের জীবনে একাধিকবার। রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনে উপরে ওঠার সিঁড়ি যখন তিনি তৈরি করেছেন, সেগুলো ভেঙে পড়েছে। আবার তাকে নতুন করে সেগুলো গড়তে হয়েছে।
বাকপটু হবার জন্য তাকে অনেক খাটতে হয়েছে। কারণ উল্টোপাল্টা ও অপ্রাসঙ্গিক শব্দ ব্যবহারের যে প্রবণতা একসময় তার ছিল, তার জন্য তাকে অনেক ব্যঙ্গবিদ্রূপ সহ্য করতে হয়েছে।
জো বাইডেন প্রায়ই একটা কথা বলেন, “বাবার একটা কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা – কে তোমাকে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, সেটা বড় কথা নয়, কত দ্রুত তুমি উঠে দাঁড়াতে পারলে, মানুষ হিসাবে সেটাই হবে তোমার সাফল্যের পরিচয়।”
প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াইয়ে হেরে গিয়েও লড়ে গেছেন মি. বাইডেন। প্রতিটা পরাজয়ের পর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
সিনেটার বব কেরি, ১৯৯০এর দশকে কংগ্রেসে মি. বাইডেনের সহকর্মী বলেছেন, “জো কখনও হাল ছাড়ে না। দরকার না হলেও তার কাজ সে করেই যায়।”
অনেকের মতে মি. বাইডেন অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে টিকে থাকা একজন ব্যক্তি।
ছবির উৎস, Bettmann/Getty Images
ডিসেম্বর ১৮, ১৯৭২ – মি. বাইডেন ছিলেন ওয়াশিংটনে। টেলিফোন বাজল, তার ভাই জিমি বাইডেন ডেলাওয়ার থেকে ফোন করেছেন। বোন ভ্যালেরির সাথে কথা বলতে চাইলেন।
বোন বললেন, “একটা ছোট দুঘর্টনা ঘটেছে। কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই।”
সেদিনই আরও পরের দিকে মি. বাইডেন জেনেছিলেন ওই দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী নেইলিয়া এবং শিশুসন্তান নেওমি মারা গেছেন। তার স্ত্রী গাড়ি চালাচ্ছিলেন। একটা লরি গাড়িতে ধাক্কা মারে। গাড়িতে থাকা তার দুই ছেলে বোও আর হান্টারও গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।
তারা ক্রিসমাস উৎসবের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়েছিলেন। মি. বাইডেন তখন সবে সেনেটার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তার কংগ্রেস অফিসের কর্মী নিয়োগের জন্য সেদিন ইন্টারভিউ নিতে ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়াও পরিবারের থাকার জন্য একটা বাসা কেনার বিষয়টি সেদিন তিনি চূড়ান্ত করতে গিয়েছিলেন।
ওই ঘটনায় তিনি একেবারেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।
“আমি কথা বলতে পারতাম না, বুকের ভেতরে একটা বিশাল শূণ্যতা অনুভব করতাম, মনে হতো একটা কালো গহ্বর আমাকে ভেতরে টেনে নিচ্ছে,” তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন মি. বাইডেন।
তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবার কথা ভেবেছিলেন, ঠিক করেছিলেন যাজক হবেন, দুই ছেলেকে মানুষ করবেন। তিনি লিখেছেন, যেসব এলাকায় খুব গুণ্ডামি হতো, সেসব এলাকায় তিনি সন্ধ্যেবেলা ঘুরে বেড়াতেন। মারপিট করতে তার ইচ্ছা হতো।
“আমার ভেতরে একটা বিরাট ক্রোধ তৈরি হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল, ঈশ্বর আমার সাথে একটা নিষ্ঠুর খেলা খেলছেন। আমার রাগ হতো।”
ছবির উৎস, Bettmann/Getty Images
জো বাইডেনের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। মি. বাইডেনের জন্মের আগে তিনি ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছিলেন। কিন্তু জো-র জন্মের পর তার ব্যবসা পড়ে যায়। জো বাইডেনের কৈশোর কেটেছে পারিবারিক অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে।
পেনসিলভেনিয়ায় খুবই সাদামাটা এক বাসায় যৌথ পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। তার পরিবার ছিল খুব ধার্মিক। ক্যাথলিক মূল্যবোধ ও তার ধর্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল পারিবারিক ধর্মচর্চ্চার সুবাদে।
ছেলেবেলায় তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তোতলামি কাটিয়ে ওঠা। স্কুলের উঁচু ক্লাস পর্যন্ত এই সমস্যা তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
পড়তে গিয়ে তার তোতলামির জন্য সহপাঠীরা তো বটেই, এমনকী শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে ঠাট্টা মস্করা করতেন।
“এখনও আমার মনে আছে সেই যন্ত্রণার কথা, লজ্জা রাগ আর অপমানের দিনগুলোর কথা,” মি. বাইডেন লিখেছেন তার স্মৃতিকথায়।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শান্তভাবে কবিতা আবৃত্তি ও সংযতভাবে কথা বলা আয়ত্ত করতে করতে, হাই স্কুল পার হবার পর তোতলামো কাটিয়ে ওঠেন তিনি।
হাই স্কুল শেষ করে তিনি পড়তে যান ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়তে।
Leave a Reply