শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
সোবহান হোসাইন : বর্তমান সরকারের অভাবনীয় উন্নয়ন আমাদের এই ক্ষুদ্র দেশকে এক ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের তালে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হচ্ছে। এই সরকারের উন্নয়ন শুধু শহর বা নগর নয়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পড়েছে উন্নয়নের ছাপ। শিক্ষা, আইসিটি, কৃষি সহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের স্বাক্ষরতা রেখে চলেছে সরকারের কর্মকান্ডে। বাগেরহাট জেলাধীন ফকিরহাট ও রামপাল উপজেলার সীমান্তবেষ্টিত প্রত্যন্ত মফস্বল এলাকা গৌরম্ভা ও শুভদিয়া ইউনিয়নের সীমান্তে অবস্থিত শেখ হেলাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজটি। এ কলেজের ভবন থেকে শুরু করে কলেজের পারিপার্শ্বিক কর্মকান্ড এক নান্দনিক শৈল্পিক চিত্র। প্রত্যাঞ্চলের দৃশ্যমান এ কলেজটি দেখলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একটি খন্ডচিত্র উঠে আসে।২০০০ সাল মাত্র ১৮ বছর আগের সময়। এতো অল্প সময়ে এ কলেজের অবকাঠামো ও গুনগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। ২০০০ সালে যখন এ দেশের মানুষ সভ্যতার একটি পর্যায়ে স্থান করে নিলেও এ অঞ্চলের মানুষ তখনও অজ্ঞতা ও কু-সংস্কারে ছিল আচ্ছন্ন। ঘরে ঘরে হানাহানী, মারামারি, কাটাকাটি ও অপুষ্ট রাজনৈতিক কলহ বিদ্যমান ছিল এ অঞ্চলের সংস্কৃতি। সেই সময়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের রুপকার জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি’র শুভদিয়ায় আগমন ঘটে। শুভদিয়া ইউনিয়নের শুভদিয়া কেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই জননেতার জনসভায় “এই জনপদে কলেজ প্রতিষ্ঠার”কন্ঠে একটিই জোরালো দাবী উঠেছিল ।সেদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃতিম ভালোবাসায় শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন এঁর নামে কলেজের নামকরনের এক সাহসী ও সদুরপ্রসারী প্রস্তাব করেছিলেন এই নদীবিধৌত অঞ্চলের আরেক জননন্দিত নেতা স্বপন দাশ। উপস্থিত জনগনের স্বরব শ্লোগান ও ব্যাপক সাড়ায় উক্ত জনসভার এক চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে রূপ নিল। শেখ হেলাল উদ্দীন ডিগ্রি কলেজটি খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা এবং বাগেরহাট জেলার রামপাল ও ফকিরহাট উপজেলার শুভদিয়া ইউনিয়নে পশুর নদীর অববাহিকায় ভোলা নদীর তীরে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৭.৫০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কলেজটি অত্র এলাকার শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বর্তমানে অধ্যয়নরত কলেজটিতে। কলেজের ইন নং-১১৪৯২৪। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কলেজটি এমপিও ভুক্ত হয় ২০০৪ সালে,এমপিও কোড- ৫৯০৩০৫৩১০১। এলাকার গন মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে কলেজ গভর্ণিং বডির ২১/০৬/২০০৬ তারিখের ৪৭তম সভায় সর্বসম্মত ভাবে কলেজে ডিগ্রি কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতীয় সংসদ সদস্য জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্র স্মারক নং-০৭(খু- ৯৮০)জাতীঃ বিঃ/কঃ পঃ/১৪৩৯ তাং-৩১/০৩/২০১০ ডিগ্রি পর্যায়ে অধিভুক্তি পাওয়া যায়। বর্তমানে ডিগ্রি পর্যায়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৬১ জন। পাসের হার ধারাবাহিক ভাবে ৮০% এর উর্দ্ধে। কলেজ সংলগ্ন এলাকায় খোজ নিয়ে জানা যায় এই কলেজকে কেন্দ্র করেই এই এলাকার ব্যাপক শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে।আজ এ অঞ্চলের প্রতি বাড়িতে ডিগ্রি পাস ছেলে মেয়ে। জনগনের দাবী কলেজ না থাকলে এই এলাকার মেয়েদেও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেতো না। অন্ধকার কু-সংস্কারচ্ছন্নে পড়ে থাকতো তারা। কেননা, এসএসসি পাসের পর মেয়েদের পড়া শুনাতো দুরে থাক বাল্য বিয়ে ছাড়া কোন লক্ষ্য তাদের ছিল না। তাছাড়া এলাকার ছেলে মেয়েরা শিক্ষিত হওয়ার পর এই এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছে সন্ত্রাস, মারামারি ও খুন খারাবির সাথে জড়িয়ে পড়তো,যা ছিল এ অঞ্চলের এক সময়ের নিত্য-নৈত্তিক কাজ। পাশাপশি ইতোমধ্যে অনেক ছেলে মেয়ে ডিগ্রি পাস করে চাকুরি জীবনে প্রবেশ করেছে, বিশেষ করে এখন প্রচুর মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরী করছে। মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা প্রাপ্তির পাশাপাশি শিক্ষার উচ্চতম স্তরে প্রবেশের আগ্রহও বেড়েছে প্রবলতর। উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহীদের দাবী এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদায় কলেজ গভর্ণিং বডির ০৯/০১/২০১৯ খ্রি. এবং ০৩/০২/২০১৯ খ্রি. তারিখের ১৩৪ ও ১৩৫ তম সভায় কলেজে ২০১৯-২০২০ শিক্ষা বর্ষ থেকে ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ব্যবস্থাপনা এবং মার্কেটিং বিষয়ে ডিগ্রি অনার্স কোর্স খোলা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্র স্মারক নং- ওঘঝ০২-৪/০০১২২/২০১৭/০১২৬/৪৩৪৯৬ তারিখ ঃ ১৫/০৪/২০১৯খ্রি.অনুমতি, শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের ০১/০৫/২০১৯ খ্রি. তারিখের সুপারিশ এবং কলেজ গভর্ণিং বডির ০৫/০৫/২০১৯ খ্রি. তারিখের ১৩৭ তম সভা এবং ২৩/০৫/২০১৯ খ্রি. তারিখের ১৩৮তম সভায় অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ডিগ্রি অনার্স পর্যায়ে কাম্য সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কলেজটিতে। সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে কলেজটিতে রয়েছে চার কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এল জি ই ডি নির্মিত তিন তলা সাইক্লোন সেল্টার কাম একাডেমিক ভবন, দুই কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মিত চার তলা আই সিটি ভবন যেখানে আইসিটি ল্যাব সহ রয়েছে সকল প্রকার ডিজিটাল সুবিধা, দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন, পচিঁশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এতদাঞ্চলের সর্ববৃহত দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার যেখানে রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাস সম্বলিত টেরাকোটার কাজ, সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন প্রকল্প তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এর শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব যেখানে ২৬ টি কম্পিউটার সহ ইন্টারনেটের সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ বটু গোপাল দাস বলেন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স বাংকের চেয়ারম্যান ও লকপুর গ্রুপ অব কোম্পানিজের সত্বধিকারী বিশিষ্ট শিল্পপতি এস,এম আমজাদ হোসেনের সহযোগিতায় প্রশাসনিক ভবনের তিন তলার কাজ প্রায় শেষের দিকে, শুভদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে চলমান কলেজ অডিটারয়ামের দোতালার কাজ। দেড় কোটি টাকা বরাদ্দে শুরু হয়েছে আর একটি একাডেমিক ভবনের কাজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে কলেজের পুকর সংস্কার ও দৃষ্টিনন্দন করবার জন্য, যে কাজটি আগামী মাসেই শুরু হবে। সতেরো লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওযা গেছে কলেজের মূল সড়ক সংস্কারের জন্য। এছাড়া মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আশ্বাস্ত করেছেন, অতি অল্প সময়ের মাঝে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কলেজ বাস ও ছাত্র ছাত্রী নিবাস করা হবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে কলেজটি উপজেলার শীর্য় পর্যায়ে রয়েছে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য রয়েছে কলেজ গভর্ণিং বডি, এলাকার সুধিজন ও অভিভাবকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা । কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেন খুলনা বিভাগের সেরা জনপ্রতিনিধি ও বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিত্ব ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ। তিনি এই কলেজটির আধুনিক রূপায়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।কলেজ অধ্যক্ষ বটু গোপাল দাশ জানান, কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন ও ফলাফল পর্যালোচনা করলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একটি খন্ডচিত্র উঠে আসে। তিনি আরও বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আমরা নতুন এক সভ্যতার স্বপ্ন দেখছি। অচিরেই কলেজে অনার্স কোর্স চালুর পাশাপাশি মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, এই এলাকাটি ছিল একটি অন্ধকারচ্ছন্ন জনপদ। এই কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চলে আলো জ্বলতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ গ্রামে বসে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে এই কলেজটির কারণে। এই কলেজটিকে কেন্দ্র করে এ জনপদের মানুষ আজ সভ্যাতায় পৌছানোর সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষা, শিল্প, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি , কৃষি সহ সকল ক্ষেত্রে রয়েছে এ সরকারের অভাবনীয় উন্নয়ন। পদœা সেতু বাস্তবায়ন দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়ন আরো ত্বরাম্বিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।্ মাননীয় সংসদ সদস্য জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই কলেজটিতে আধুনিকতার স্পর্শ পেয়েছে। কলেজটিতে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য তিনি মাননীয় সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান এবং কলেজটির উত্তোত্তর উন্নয়ন কামনা করেন। বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মো: কামরুজ্জামান জানান, এ সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ধরণের উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়নে যেভাবে কাজ করে চলছে, তাতে অতি স্বল্প সময়ে শিক্ষায় বাংলাদেশ বিশে^র একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে। শেখ হেলাল উদ্দীন ডিগ্রী কলেজেটিতে অনার্স কোর্স চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষ আরও অধিকতর সুযোগ সুবিধা পাবে। ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: শাহানাজ পারভীন জানান, প্রত্যন্ত জনপদে এই ধরনের একটি কলেজ প্রশংসার দাবি রাখেন। তিনি কলেজটি বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন করেছেন। শিক্ষকদের আন্তরিকতায় কলেজটি এ পর্যায়ে পৌছিয়েছে। ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমে পাঠদানে কলেজটি অগ্রণী ভ’মিকা রেখে চলেছে।বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ জানান, তিনি কলেজটি পরিদর্শন করেছেন এবং কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালকরণের জন্য সুপারিশ করেছেন। এ কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন ও লেখাপড়ার মান সন্তোষজনক। তিনি কলেজটির টেরাকোটা শহীদ মিনার ও ক্যাম্পাসের প্রশংসা করেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের উন্নত কলেজ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একটি প্রতিচ্ছবি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর হারুন-অর রশীদ জানান, তিনি কলেজটিতে আকস্মিক পরিদশন করেছিলেন। কলেজটির পারিপাশির্^ক পরিবেশ, কলেজ ক্যাম্পাস, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, একাডেমিক ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তাকে মুগ্ধ করেছে। গ্রাম্য পরিবেশে এ ধরণের একটি আধুনিক কলেজ এলাকাটিকে আরও সুন্দর ও নান্দনিক করে তুলেছে। এই জনপদের মানুষ কলেজটিকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছে।
Leave a Reply