শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন
শীর্ষ নিউজ : “শিক্ষাই আলো” “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” এ উপদেশ বাণীগুলোর চাইতেও শিক্ষার ইতিহাস অনেক পুরাতন। কারণ শিক্ষার ভাল ফল পাওয়ার পরই সম্ভবত: এই উপদেশ বাক্যগুলোর জন্ম। মানব সভ্যতার বয়স যতদিন, শিক্ষার বয়সও ততদিন। কারণ প্রথম মানুষকে আল্লাহ তা’আলা একজন জ্ঞানী ও নবী হিসাবেই খলীফা করে পাঠিয়েছেন। উম্মতে মুহাম্মদীর শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু হয়। আল্লাহ তা’আলার বাণী “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন” মসজিদে নববীতে অবস্থিত ‘সুফফা’ হলো ইসলামের প্রথম জামেয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এর প্রথম শিক্ষক এবং সাবাহায়ে কিরাম প্রথম ছাত্র সমাজ। এখান থেকে শিক্ষার ইতিহাস সামনে অগ্রসর হয়। খোলাফায়ে রাশেদীন, উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি ঘটে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা একটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। মুসলিম শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসকগণ শিক্ষা সভ্যতার অভূতপূর্ব অবদান রাখেন। এ সময়ে তারা ইসলামী শিক্ষার একটি বুনিয়াদি কাঠামো দাঁড় করিয়ে ছিলেন। শুধু রাজধানী দিল্লিতেই ১০০০ মাদ্রাসা ছিল। প্রফেসর ম্যাক্স মুলারের মতে ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে শুধু বাংলাতেই ৮০ হাজার মাদ্রাসা ছিল। ক্যাপ্টেন হেমিলটনের মতে সিন্ধুর প্রসিদ্ধ ঠাট্টানগরীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শিল্পকলার চারশত প্রতিষ্ঠান ছিল।কিন্তু ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে পরাজয়ের পর উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। শুরু হয় ইংরেজ শাসন। ইংরেজগণ তাদের শাসন ব্যবস্থা নীতি প্রয়োগ করে। এ নীতির মূল লক্ষ্য ছিল দ্বিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে মুসলমানদের মাঝে জাতিগত বিভাজনের আয়োজন করা। বৃটিশ এ দেশ থেকে চলে গেছে সেই ১৯৪৭ সালে। তাদের সৃষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা আজো অক্ষুন্ন আছে। এ দীর্ঘ সময়ে পাঠ্যসূচিতে অনেকটা খাপছাড়াভাবে কিছুটা পরিবর্তন আসলেও শিক্ষানীতির মূল কাঠামো রয়ে গেছে অপরিবর্তিত। নিম্নে আদর্শ জাতি গঠনে ইসলামী শিক্ষা তথা মাদ্রাসা শিক্ষার অবদান তুলে ধরা হলো। ইসলামী আদর্শের কাজ হলো পরিপূর্ণ মানবসত্তার লালন করে এমনভাবে গড়ে তোলা। যার এমন একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি যে, মানুষ তার দেহ, বুদ্ধিবৃত্তি এবং আত্মা তার বস্তুগত ও আত্মিক জীবন এবং পার্থিব জীবনের প্রতিটি কার্যকলাপের কোনটিই পরিত্যাগ করে না। আর কোন একটির প্রতি অবহেলা বা মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকেও পড়ে না।” মহাকবি মিল্টনের মতে শিক্ষা হলো “শিক্ষা হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে বিকশিত মুক্ত সচেতন মানবসত্তাকে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে উন্নত যোগসূত্র রচনা করার একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া যেমনটি প্রকাশিত হয়েছে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগগত এবং ইচ্ছাশক্তি সম্বন্ধীয় পরিবেশে”। উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে শিক্ষার মৌল দর্শন হিসেবে যা পাওয়া যায় তাহলো- শরীর, মন ও আত্মার সামগ্রিক উন্নতি। আর এই উন্নতি শিক্ষা ছাড়া হতে পারেনা। শিক্ষার উদ্দেশ্যই ছিল একটি নৈতিক ভিত্তি সৃষ্টি করা। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা।আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতিকে সঠিক জীবন যাপনের জন্য যেসব মহান নবী-রাসূলগণকে পাঠানো হয়েছিল তাদের কাজ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তারা আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন বা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের মানদ- সম্পর্কে মানুষকে পড়ে শুনান। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেন আর শিক্ষা দেন জীবন যাপনের কৌশল। অথচ এর পূর্বে তারা ছিল সুষ্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত” কুরআনে পাকে আল্লাহ তা’আলা কমপক্ষে তিনবার শিক্ষা সম্পর্কে এ কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন। যা সকল যুগে প্রযোজ্য। আমেরিকার একজন সমাজ দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ বলেন” ইসলামী যুগের শুরুতে, মধ্যযুগে এবং অতি সাম্প্রতিক কালেও ঔপনিবেশিক যুগের আগ পর্যন্ত মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ছিল কুরআন, হাদিস, সিরাত ও ফিকাহর ওপর। এর সাথে সাথে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, যাবতীয় সাইন্স এসবের গুরুত্ব ছিল। ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা পৃথিবী কোন ধর্মগ্রন্থে বা মনীষীর বাণীতে পাওয়া যাবে না। আল কুরআনের প্রথম বাণী ছিল শিক্ষা সংক্রান্ত। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে। পড়ুন আর আপনার রব মহামহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না”।
Leave a Reply