মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ বর্তমান বিশ্বে এক আতঙ্কের নাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এ রোগকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা কার্যত সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে।
ইউনেস্কোর তথ্যমতে বিশ্বের ১৬০টিরও অধিক দেশ তাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে সারা বিশ্বের ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি অত্যন্ত ভাবনার বিষয়।
বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় তো বটেই। বাংলাদেশ সরকার প্রথমে ১৮ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও পরবর্তী সময়ে তা কয়েক দফা বর্ধিত করেছে, যা পরে আরও বর্ধিত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবস্থার পরিবর্তন না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এই দীর্ঘ বন্ধে প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় যাতে করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য সরকার ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ই-পাঠদানের (ভিডিও ক্লাস) মাধ্যমে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে।
কিন্তু এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে পাঠদান করার জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত? এই মাধ্যমগুলো দিয়ে পাঠদান করতে গেলে কিছু সমস্যার কথা প্রথমেই অনুমান করা যায়, যা হল- অনেক শিক্ষার্থীর বাসায় টিভি, রেডিও বা মোবাইল ফোন নেই, অনেক শিক্ষার্থী আছে যার ইন্টারনেট সংযোগ নেই বা থাকলেও তা অনেক ধীরগতি সম্পন্ন। তাহলে এই শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা কিভাবে পাঠদান নিশ্চিত করব?
এক্ষেত্রে আমাদের যা করতে হবে তা হল- প্রত্যেক শিক্ষকের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। প্রত্যেক শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের অবস্থা যাচাই করবে; তার শিক্ষার্থীরা এই মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে পাঠদানে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা তা যাচাই করবে। তাদের সমস্যাগুলো এবং বিকল্প উপায়গুলো চিহ্নিত করবে।
যেমন ধরা যাক, কোনো শিক্ষার্থীর বাসায় টিভি, রেডিও বা মোবাইল ফোন এগুলোর কোনোটাই নেই। তাহলে সে কী করবে? সে কিভাবে পাঠদানে অংশগ্রহণ করবে? সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করবেন।
মন- কিভাবে অন্যের সাহায্য নিয়ে পাঠে অংশগ্রহণ করবে তার ব্যবস্থা করে দেবে, কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে জোড়া (ট্যাগ) করে দেবে অথবা এলাকার মধ্যে যার বাসায় টিভি, রেডিও বা মোবাইল ফোন আছে এমন পরিবারের সাহায্য নিয়ে তার পাঠদানে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সর্বক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে এবং শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
সরকার একটি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠদান পরিচালনা করার কথা ভাবছে। কিন্তু এটা কতটা যৌক্তিক? দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ১২০টিরও বেশি পাঠ্যপুস্তক। ধরা যাক ১২০টি পাঠ্যপুস্তক, এই শতাধিক বিভিন্ন বিষয়ের বা শ্রেণির পাঠদান কি একটি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রদান করা আদৌ সম্ভব? অন্যদিকে সব বিষয়ের পাঠদান কি জরুরি? এসব বিবেচনার বিষয়।
ধরা যাক সব বিষয়ে পাঠদান জরুরি নয়, সেক্ষেত্রে কিছু অত্যাবশ্যক বিষয়ের ক্ষেত্রে পাঠদান তো অবশ্যই জরুরি। সব শ্রেণির কিছু অত্যাবশ্যক বিষয়ের পাঠদান করতে গেলেও একটি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠদান করা কষ্টসাধ্য বিষয় হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একাধিক টিভি চ্যানেল ও রেডিও সেন্টার ব্যবহার করে যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে কখন কোন চ্যানেলে কোন শ্রেণির কোন বিষয়ের পাঠদান করা হবে, তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকতে হবে এবং এটা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে, যাতে করে সব শিক্ষার্থী সময়মতো পাঠে অংশগ্রহণ করতে পারে। সেই সঙ্গে সব শিক্ষার্থীর পাঠে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য পাঠের রেকর্ড বিভিন্ন মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান সমস্যা হচ্ছে ইন্টারনেট সমস্যা; এর পরেই যে সমস্যা আসে তা হচ্ছে ডিভাইসের (ল্যাপটপ/কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন না থাকা অথবা ত্রুটিপূর্ণ ডিভাইস) সমস্যা বা অপ্রতুলতা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়ার ফলে অনেক শিক্ষার্থীই তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে, যেখানে অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগ নেই বা অনেক ধীরগতি সম্পন্ন। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যা করতে পারে তা হল শিক্ষার্থীদের অবস্থা যাচাই করা, অর্থাৎ কতজন শিক্ষার্থীর জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পাঠদানে অংশগ্রহণ করতে সমস্যা হচ্ছে তা দেখা।
ধারণা করা যাচ্ছে, এ ধরনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হবে না। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। যেমন আশপাশের কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে জোড়া (ট্যাগ) করে দেয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি কমন শেয়ার ড্রাইভ করতে পারে, যেখানে পাঠগুলো সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যাতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামতো সময়ে ডাউনলোড করে পড়তে পারে। শিক্ষা হোক মুক্ত ও উন্মুক্ত।
Leave a Reply